প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে মারা গেছে পাঁচজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে গতকাল শুক্রবার দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোয় ভর্তি ছিল ৯৩৩ জন রোগী। এর মধ্যে রাজধানীতেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ভর্তি আছে ৭৭০ জন ডেঙ্গু রোগী।
সরেজমিনে গতকাল রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের রাজধানীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই তিনটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য
নির্দিষ্টসংখ্যক শয্যার ব্যবস্থা থাকলেও তা দ্রুত পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আবার অতিরিক্ত রোগী আসার কারণে কোনো কোনো হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য মশারির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেক হাসপাতালে তা মানতে দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শিশুর হাতে ক্যানুলা, বেডের স্ট্যান্ডে ঝুলছে স্যালাইনের ব্যাগ। শয্যা না থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক শিশুর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। অনেক শয্যায় আবার দুজন রোগী। তবে সেখানে কারো শয্যাতেই মশারি টানানো ছিল না।
কেরানীগঞ্জের মালোপাড়ার সামিয়া আক্তার ছেলে সামিরকে নিয়ে এসেছেন এই হাসপাতালে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, টানা চার দিন সামিরের ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর, সঙ্গে বমি। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে শেষে ছেলেকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
মেঝেতে ঠাঁই পাওয়া ডেঙ্গু রোগী সানজিদা আক্তার রুপার মা ইয়াসমিন জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তাঁর মেয়ের থেমে থেমে জ্বর হচ্ছে। জ্বরের মাত্রা ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। সঙ্গে দেখা দিচ্ছে খিঁচুনি। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথমে রুপাকে সাধারণ জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু কিছুতেই জ্বর সারছিল না। পরে পরীক্ষা করে জানতে পারেন মেয়ের ডেঙ্গু হয়েছে।
খিলগাঁও সিপাহীবাগের সিএনজিচালক বিল্লাল ডেঙ্গু আক্রান্ত। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০ তলার করিডরে মশারি টানিয়ে শুয়ে আছেন। পাশে স্ত্রী সালেহা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। বিল্লালের মতো আরো অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালটির করিডরে ঠাঁই নিয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালটির করিডরে বেড ফেলে ওয়ার্ড করা হয়েছে।
গতকাল ওই হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যাগুলোয় মশারি টানিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ডেঙ্গু রোগীরা। সেখানে চারটি ইউনিটে মোট ২০ জন পুরুষ ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে রোগী আছে ১৭ জন। মহিলা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে পাঁচজন রোগী। প্রায় সব বের্ডই রোগীতে পূর্ণ।
করিডরে দায়িত্বরত একজন নার্স বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে এখানে। রোগীর চাপে করিডরে একাধিক ইউনিট খোলা হয়েছে। ’
বেশির ভাগ রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ জ্বর ভেবে অনেকে হেলাফেলা করে। হাসপাতালে আসে যখন, তখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট অনেক কমে যায়। মহিলা রোগীদের এ সমস্যা বেশি। ’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতালে বর্তমানে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ১৯ জন। চলতি বছর এই হাসপাতালে মোট এক হাজার ১৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছে এক হাজার ৯৫ জন। ’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমাদের শয্যাসংখ্যা ৭০টি। প্রয়োজন হলে শয্যাসংখ্যা আরো বাড়ানোর সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে।কুর্মিটোলা হাসপাতালের পঞ্চম তলায় চিকিৎসাধীন আছে ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে।
ভর্তি রোগী হালিমা বেগম জানান, সার্বক্ষণিক তদারকিতে দুজন ডাক্তার থাকেন এবং চার থেকে পাঁচজন নার্স কাজ করেন। ডাক্তার দিনে দুবার এসে খোঁজ নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী জানান, ছুটির দিনগুলোয় ডাক্তার এবং নার্সের উপস্থিতি কম থাকে।