fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িঢাকাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সভাপতি-সম্পাদকের দুর্নীতির খতিয়ান নিয়ে আ.লীগ কার্যালয়ে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা

সভাপতি-সম্পাদকের দুর্নীতির খতিয়ান নিয়ে আ.লীগ কার্যালয়ে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা

ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অপকর্মের লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে জমা দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে সিলগালা করা অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

সংক্ষুব্ধ নেতারা জানান, অভিযোগপত্রটি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতার কাছে হস্তান্তর করা হবে। আমরা অভিযোগপত্রটি ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরতে চাই, এ জন্য দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে ছাত্রলীগ নেতা কামাল খান বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই কাণ্ডারির স্বেচ্ছাচারিতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের বিষয় উল্লেখ করেছি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছি। ’

তিনি জানান, অভিযোগপত্রে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নানা অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগপত্রে প্রায় ১০০ কেন্দ্রীয় নেতার সই নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, আগস্টে জাতীয় শোক দিবসের মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণ, ছাত্রলীগের দুই কাণ্ডারির স্বেচ্ছাচারিতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন, পদ-বাণিজ্য, প্রেস রিলিজের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া রাতের আঁধারে কমিটি গঠন—এসব বিষয় আছে অভিযোগপত্রে।

এছাড়াও বিবাহিত, চাঁদাবাজ, মাদকসেবী, ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীদের কমিটিতে পদায়ন, সাধারণ সভা না করা এবং সংগঠনের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। আগস্টে জাতীয় শোকের মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণের নামে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ৫০০ জনের অধিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তানদের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। পদায়িত নেতারা শোকের মাস আগস্টকে ভুলে গিয়ে আনন্দ উল্লাস ও অভিনন্দনে ফেটে পড়েন। যার প্রভাবে তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে নিদারুণভাবে আহতবোধ করেন; যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক সমালোচনা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ আছে, আগস্টের শুরুতে পাঁচটি জেলা ইউনিটের নতুন কমিটি ও দুটি জেলা ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে মন্দির ভাঙার অপরাধে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত একজনকে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদায়ন করা হয়। বরগুনা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যোগ্যদের মূল্যায়ন না করে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সম্মেলন আসন্ন বিধায় গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আর্থিক লেনদেন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে একের পর এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সম্মেলন থেকে ফেরার পথে মাদকসহ বিজয়নগর থানা পুলিশ ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুজন সহসভাপতিকে গ্রেফতার করে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংসদের এজিএস ও হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্নীকে মারধর করে মারাত্মক জখম করার অপরাধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশি ও সহ-সভাপতি জেয়াসমিন শান্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। চার বছর চার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়নি এবং এ বিষয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তারা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদ চার বছর তিন মাস পার হয়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্য এবং সংগঠনকে বিতর্কিত করতে সম্মেলন ছাড়া যাতে নতুন করে কোনো কমিটি করতে না পারে সে জন্য সংগঠনের অভিভাবকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র ঘিরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে সংগঠনের ওই সময়ের সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দুই শীর্ষ নেতাকে ‘ভারমুক্ত’ করে পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্ত হওয়ার পর তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

নেতারা অভিযোগ করেন, জয়-লেখক ভারমুক্ত হলেও ঝামেলামুক্ত হয়নি ছাত্রলীগ। উল্টো এ দুই নেতার কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগ নতুন করে বিতর্কিত হয়েছে। সাংগঠনিক কাজে তারা অন্য নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন না। তাদের কিছু কাছের লোক সব ধরনের অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালান।

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও দেখভালের জন্য ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেক হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে থাকায় এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments