চলতি বছরের নভেম্বরে সুপার সাইক্লোনের যে পূর্বাভাস রয়েছে, সেটি দেশের উপকূল, বিশেষ করে সুন্দরবন ঘেঁষে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২ উপলক্ষে বুধবার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদফতর বঙ্গোপসাগরে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। এখনও তেমন কোনো বার্তা মেলেনি। আশা করি, আমরা আগাম বার্তা থেকে প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হব।প্রতিমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে ৭-১০ দিনের পূর্বাভাস অনেক নির্ভুলভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে টর্নেডোর পূর্বাভাস বিষয়ে বর্তমান সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে।বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও সময়োপযোগী ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে ১১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফরকাস্ট সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আগামী ২২ অক্টোবর সকাল ৬টার পর উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সংস্থার দেয়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য সুপার সাইক্লোনের গতিপথ কিছুটা উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী সুপার সাইক্লোনটি ২২ অক্টোবর সকালে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে কানাডার পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী ২১ অক্টোবর সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক মধ্যবঙ্গোপসাগরে অবস্থান করবে। সে ক্ষেত্রে উপকূলে আঘাত হানার সময় আগে-পরে হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে আঘাতের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, এমনকি স্থলভাগে আঘাত হানার মাত্র ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা আগেও গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ স্থলভাগে আঘাত করার ১০ দিন আগের পূর্বাভাসে যুক্তরাষ্ট্রের মডেল, কানাডার মডেল ও ইউরোপিয়ান মডেল তিনটি ভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির আঘাত হানার কথা বলেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি পরিবর্তিত হয়েছে। আম্ফান স্থলভাগে আঘাত হানার তিন দিন আগে (১৮ মে) তিনটি মডেলই জানিয়েছিল ঝড়টি ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানবে।
‘তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সম্ভাব্য গতিবেগ ও স্থলভাগে আঘাত হানার স্থান সম্পর্কে কিছুটা স্পষ্ট ধারণা পেতে আমাদের হয়তো অন্তত ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যোগ করেন তিনি।প্রসঙ্গত, অক্টোবর মাসের ১৮ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির আশঙ্কার কথা নির্দেশ করছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফরকাস্ট সিস্টেম বা জিএফএস। সংস্থাটির প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুপার সাইক্লোনটি বাংলাদেশ বা ভারতের উপকূলে ২১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানতে পারে।
এ ছাড়া অক্টোবরের ২৫ তারিখ অমাবস্যা শুরু হবে। ফলে ঝড়টি যদি অক্টোবরের ২২ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকা লন্ডভন্ড করে দিতে পারে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগরতীরের ১৩টি দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং’। ‘সিত্রাং’ নামটি থাইল্যান্ডের দেয়া।