ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা আটকে আছে। হাতে যা টাকা ছিলো তাও শেষ হয়ে গেছে মায়ের চিকিৎসায়। নিরুপায় হয়ে নিজেকে শ্রমিক হিসেবে বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন বান্দরবান সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ারুল ইসলাম মামুন।
১৪ অক্টোবর নিজেকে শ্রমিক হিসেবে ১০ বছরের জন্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন কলেজশিক্ষার্থী মামুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের পান বাজারের বাসিন্দা মামুন। তিন মাস আগে মা খালেদা বেগমের জরায়ু ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এম এ আউয়ালের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। এতে মামুনের সর্বমোট ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, তার ব্যক্তিগত ৮ লাখ আর বাকি টাকা ধার নেয়া।উপায় না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে নিজেকে ১০ বছরের জন্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম মামুন।
এ বিষয়ে মো. আনোয়ারুল ইসলাম মামুন জানান, মায়ের জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হয় গত চারমাস আগে, তখন থেকে চিকিৎসা চালাচ্ছি। মায়ের ক্যান্সারের স্টেজ ফোর। বাম পাশের কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। ডান পাশেরটা চলমান রাখার জন্য অপারেশনের মধ্য দিয়ে পাইপ বসানো হয়েছে।
তিনি জানান, মায়ের জন্য আমি সব করতে পারি। মাকে বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ১০ বছরের জন্য শ্রমিক হিসেবে বিক্রি করতে ঘোষণা দিয়েছি।মামুন বলেন, আমি বৈধ যেকোনো কাজ করতে পারবো। আমার সঙ্গে এখনো কাজের সন্ধান দিয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি তবে কাজ পেলে আমি যোগ দেব এবং সেই অর্থ দিয়ে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাব।তিনি আরও জানান, আমার পিতা আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। উন্নত শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি এখন বৃদ্ধ। এই বয়সে আমি যদি মা-বাবার দায়িত্ব নিতে না পারি তবে আমি সন্তান হিসেবে ব্যর্থ।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন সমাজের বিত্তবানরা যদি আমার মায়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। গ্রামে অল্প কিছু জায়গা আছে মায়ের চিকিৎসার জন্য সেই সম্বলটুকু বিক্রি করে দেব।
আলীকদম সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে শ্রমিক হিসেবে ১০ বছরের জন্য বিক্রির কথা বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা যদি একটু এগিয়ে আসেন তাহলে মামুন তার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারেন।
এদিকে সামাজিকমাধ্যমে নিজেকে বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসার ঘোষণার পর থেকে অনেকেই তার এই ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একইসঙ্গে অনেকেই নিজ নিজ নাস্তার অর্থ ও অপ্রয়োজনে খরচ করা অর্থ মামুনকে প্রদানের জন্য আহবান জানিয়েছেন।