প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে যুবক খুন হওয়ার মামলায় লক্ষ্মীপুরের আদালত তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নিহত মেহেরাজ হোসেন নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন উত্তর হুগলি গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। এ ঘটনায় মামলার বাদী ছিলেন মেহেরাজের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান।
আদালতের পাবলিক পসিকিউটর জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, আসামিরা ভিকটিম মেহেরাজকে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাহবুব ২ মার্চ বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে হত্যাকারী কারো নাম উল্লেখ না করলেও মেহেরাজের বন্ধু মামুনের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আবদুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তখন তিনি হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।২০২০ সালের ৩০ মে চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন আদালতে হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেন জমা দেন।
তাতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃষ্টি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাটের কাপড় দোকানের কর্মচারী তানভীর হোসেন বিজয়ের। একই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মেহেরাজও। এতে তানভীর তার অন্য দুই বন্ধু আবদুল্লাহ আল মামুন ও সজীব আহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তাদের জন প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি মামুন তার বন্ধু মেহেরাজকে লক্ষ্মীপুরের দাশেরহাট থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করতে বলে। ভাড়া করা মোটরসাইকেলটি নিয়ে ওই দিন তারা বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করেন। পরে বিকেলে তানভীর নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাট থেকে একটি বস্তা, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও স্পিড কিনে নেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তানভীর, সজিব, মেহেরাজ ও মামুন মোটরসাইকেলে করে মুন্সি তালুক গ্রামে আসেন। সেখানে তারা সবাই স্পিড পান করেন আর নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশানো স্পিডটি মেহেরাজকে দেওয়া হয়। এতে মেহেরাজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তানভীর মেহেরাজের কোমরের বেল্ট খুলে তার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
হত্যার পর মেহেরাজের মরদেহটি একটি বস্তায় ভরে তানভীর এবং মামুন তা মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের টক্কার পোল ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেন।