ইসরায়েল এবং লেবানন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক ঐতিহাসিক সমুদ্রসীমা চুক্তিতে সই করেছে, যার ফলে দু’দেশের জন্যই সমুদ্রের তলদেশের বিরোধপূর্ণ গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস আহরণের পথ খুলে গেল। এ চুক্তিতে সই করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ এবং লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন।এমন দুটি দেশের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হলো, যাদের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কাগজে-কলমে তাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে বিরোধের কারণে দু’দেশের মধ্যে সংঘাত বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে ইসরায়েল যদি বৈরুতের সম্মতি ছাড়া গ্যাস ক্ষেত্রে খনন শুরু করে, লেবাননের হিজবুল্লাহ সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে বলে দীর্ঘ দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল।এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চুক্তি হলো লেবানন ও ইসরায়েলে মধ্যে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো যখন গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, তার মধ্যে দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই সমঝোতা হলো।লেবানন এখন তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের ভাষায় এটি আধুনিককালের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সঙ্কট। লেবানন আশা করছে, সাগরতলের গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস আহরণ করতে পারলে তাদের দুর্দশা কিছুটা লাঘব হবে। তবে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে লেবাননের পক্ষে দ্রুত গ্যাস আহরণে যাওয়া সম্ভব হবে না, এতে সময় লাগবে।
অন্যদিকে ইসরায়েলে নভেম্বরের এক তারিখে সাধারণ নির্বাচন, তার আগে প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদের জন্য এরকম একটি সাফল্য দরকার ছিল। চুক্তি সই হওয়ার কিছু আগে লাপিদ দাবি করেন, লেবানন যে এরকম একটি চুক্তি করলো, তার মানে তারা ইসরায়েলকে কার্যত স্বীকৃতি দিচ্ছে।কিন্তু লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ একটি কারিগরি কাজ মাত্র, এর কোন রাজনৈতিক অর্থ নেই।লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছাড়া এই চুক্তি হওয়ার সুযোগ ছিল না। ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে এর আগে অনেকবার যুদ্ধ হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৬ সালে ৩৪ দিনের যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।