‘নিজের হাতে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে এসেছি, নিজের হাতে বাড়ি নিয়ে যাব, অন্য কিছু হবে না’— ঐন্দ্রিলা শর্মাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এসব কথা বলেছিলেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী। হাসপাতাল থেকে প্রিয় মানুষটিকে নিজে হাতেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন সব্যসাচী। কিন্তু সুস্থ করে নিয়ে যেতে পারেননি। মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে তার সকল প্রচেষ্টা!
২০১৫ সালে টেন্টস নামক বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা শর্মা। প্রায় দেড় বছরের লড়াই শেষে ক্যানসার জয় করেন তিনি। ১৬টি কেমোথেরাপি ও ৩৩টি রেডিয়েশনের পর সুস্থ হন এই অভিনেত্রী। ২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক ঘটে ঐন্দ্রিলার। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করনে সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলা। মূলত, এ ধারাবাহিকের সেটে প্রথম পরিচয় তাদের। সময়ের সঙ্গে পরস্পরের মাঝে তৈরি হয় বন্ধুত্ব, প্রেম। তারপর দারুণভাবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উদযাপন করছিলেন এই যুগল।
গত বছরের শুরুর দিকে শুটিং সেটে আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐন্দ্রিলা। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নানা পরীক্ষার পর ডাক্তাররা জানান, ঐন্দ্রিলার ডান ফুসফুসে টিউমার হয়েছে। আবার উদ্বেগ ভর করে ঐন্দ্রিলা ও তার মা-বাবার মনে। আর প্রেমিক সব্যসাচী প্রিয় মানুষটির পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকেন। ফুসফুসে টিউমার— এ খবরই শেষ ছিল না। ডাক্তারদের একটি বয়ানে ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর মাথায় যেন পাহাড় ভেঙে পড়ে। কারণ এ টিউমারে ক্যানসারের জীবাণু পাওয়া যায়। ফের শুরু হয় নতুন আরেকটি যুদ্ধ; করা হয় অস্ত্রোপচার। অর্ধেক ফুসফুস কেটে ফেলা হয়; আধাখানা ফুসফুস নিয়ে চলতে থাকে কেমিওথেরাপি। আর এ যুদ্ধে ঐন্দ্রিলার হাতটি শক্ত করে ধরেন সব্যসাচী; ভালোবাসা, ভরসা ও শক্তি জুগিয়ে যান তিনি। এক মুহূর্তের জন্য প্রিয় মানুষটিকে একলা ছাড়েননি সব্যসাচী। এ যাত্রায়ও ক্যানসারকে হারিয়ে জয়ী হন এই যুগল।
সূর্যগ্রহণে পৃথিবীতে যেমন অন্ধকার নেমে আসে, ঐন্দ্রিলার জীবনেও ক্যানসার ছিল নিকষ কালো অধ্যায়। আর এই আঁধার কাটাতে আলো হয়ে পাশে থাকেন সব্যসাচী। চলতি বছরে দ্বিতীয়বার ক্যানসারকে হারিয়ে লাইট, ক্যামেরা অ্যাকশনে ফিরেন ঐন্দ্রিলা। কেটে যায় সব আঁধার। বাহারি আলোকছটায় ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতে থাকেন তারা। হাতে হাত রেখে চলতে থাকে জীবন।
পৃথিবীতে অলৌকিক অনেক কিছু ঘটে। সব্যসাচীও চেয়েছিলেন- ঐন্দ্রিলার ক্ষেত্রেও এমন অলৌকিক কিছু ঘটুক। কিন্তু তা হয়নি। ঐন্দ্রিলা অসুস্থ হওয়ার দিন কয়েক আগে ছিল সব্যসাচীর জন্মদিন। দু’জনের হাসিমাখা ছবি দিয়ে ঐন্দ্রিলা লিখেছিলেন—‘আমার বেঁচে থাকার কারণ।’ দু’জন দু’জনার প্রেমে মাখামাখি হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খলনায়ক ‘মৃত্যু’ সব্যসাচীর কাছ থেকে আলাদা করে দিলো ঐন্দ্রিলাকে। স্মৃতি এখন তার নিত্যসঙ্গী!