fbpx
বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
বাড়িরাজনীতিবিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসন নিতে চায় জাপা

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসন নিতে চায় জাপা

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের পর জাতীয় সংসদের শূন্য আসনগুলোতে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির শীর্ষ দুই নেতা গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর পর থেকে জাপায় উপনির্বাচনের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের আদালতের সিদ্ধান্তে প্রায় দেড় মাস ধরে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পর্কের টানাপোড়েনের নানা আলোচনা আছে দলটিতে। তবে গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর গণভবনের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এরপর টানাপোড়েনের সম্পর্কে নাটকীয় মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন জাপার নেতারা।

এই বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। সেখানে চেয়ারম্যানকেও (জি এম কাদের) ডেকেছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমরা কিছু জানি না।’

তবে জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, এই বৈঠকের বিএনপির সংসদ সদস্যদের শূন্য আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জাপা উৎসাহিতবোধ করছে। জাপার নেতারা মনে করছেন, সংসদে আওয়ামী লীগের আসনসংখ্যা যথেষ্ট, তাই শূন্য হওয়া আসনগুলোতে জাপা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় পাবে।

বর্তমানে সংসদে জাপার ২৬ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জন নির্বাচিত, ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য।

বিএনপির ছয়জন সংসদ সদস্য গত রোববার জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, ঠাকুরগাঁও-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও একটি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন হবে। তবে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্যের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ বিদেশে থাকায় সশরীর উপস্থিত হয়ে পদত্যাগপত্র দিতে পারেননি। তাই তাঁর আসনটি শূন্য হয়নি।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জি এম কাদের গণভবনে যান। এর কিছু সময় পর রওশন এরশাদ ও ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ সেখানে পৌঁছান। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একত্রে এবং পৃথকভাবে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন।

এ বিষয়ে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (রওশন এরশাদ) দীর্ঘদিন চিকিৎসার জন্য বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছিলেন। সেখানে আমাকেও ডেকেছিলেন। এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ।’

সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর যেকোনো দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং কুশল বিনিময় করেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। জাতীয় পার্টি এ লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে।

এদিকে জাপার সাবেক এক নেতার করা মামলায় আদালতের আদেশের কারণে গত ৩০ অক্টোবর থেকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে দূরে আছেন। আদালতের ওই আদেশ জারির পর জাপার ভেতরে আলোচনা ওঠে যে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর সরকার নাখোশ। কারণ, জি এম কাদের সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে সরকারের কড়া সমালোচনা করে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেটা সরকারের উচ্চ মহলের পছন্দ হচ্ছিল না।

অন্যদিকে জি এম কাদের তাঁর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে প্রথমে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ও পরে উচ্চ আদালতে যান। গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা আসেনি। এই মামলার নেপথ্যে সরকারের উৎসাহ রয়েছে কি না, তা নিয়ে শুরু থেকেই জাপার নেতা-কর্মীদের মধ্যে সন্দেহ ও আলোচনা রয়েছে।

জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত সোমবার আপিল বিভাগ আদেশের জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য রেখেছিলেন। গতকাল আদেশ হয়নি।

তবে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের সাক্ষাতের পর জাপার সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, সেটার একটা সুরাহা হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলের অনেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সংখ্যায় সাতজন হলেও জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে সরকার রাজনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে। ফলে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপার গুরুত্ব সরকারের কাছে বেড়েছে। তাই রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বিএনপির শূন্য আসনগুলো জাপাকে দিতে চায় সরকার।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির শূন্য আসনগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাপা শূন্য আসনগুলোতে উপনির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments