ভোটের আগে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে তৎপর হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি গত এক মাসে এসব সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে এখন পুরোনো প্রতিশ্রুতি, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই এই তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে সেই নির্বাচনে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করেনি তারা। এই অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলোর ভেতরে, তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কের টানাপোড়েনও তৈরি হয়।
এখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংগঠনগুলো সভা–সমাবেশ করছে। তবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কখনই খারাপ ছিল না—এমন দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের দাবিদাওয়ার বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট। রাজনৈতিক বাস্তবতায় সব সময় সব দাবি মেটানো সম্ভব হয় না। তবে এখন আমরা চেষ্টা করছি।’
যদিও ক্ষমতাসীনেরা সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয় মানতে রাজি নয়, কিন্তু দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অন্যতম একটি সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেছেন, ক্ষমতাসীনেরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে এত দিন কোনো কথা বলেনি। এখন তারা আমাদের কথা শুনছে এবং ভোটের আগেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা বলছে।
সরকারের শেষ সময়ে এসে ভোটের রাজনীতির বিবেচনায় আওয়ামী লীগ যে এখন সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ঘাটতি মেটাতে তৎপর হয়েছে, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে শুধু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গেই প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে অন্তত ছয়টি বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও চলছে নানা আলোচনা।
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাঁদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া আছেন। এ ছাড়া আছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার।
অন্যদিকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ২৩ সেপ্টেম্বর গণ–অনশন কর্মসূচি ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের। সাত দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অনশনের ৩৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সেখানে যান আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার। তিনি সাত দফার মধ্যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন।
ঠিক একই দাবিতে গত বছরের (২০২২) ২২ অক্টোবর রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনশন করে ঐক্য পরিষদ। সেদিন অনশন ভাঙান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তবে ওই দিন অনশনস্থলে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের কেউ যাননি।
এবার নির্বাচনের আগমুহূর্তে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
ঐতিহাসিকভাবেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালো ছিল। তাদের ভোটের বড় অংশ আওয়ামী লীগের দিকেই যায় বলে মনে করা হয়। তবে সম্প্রতি এসব সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলোর সঙ্গে শাসক দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।