সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলাসহ পুলিশের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ পুলিশকে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯টি শিপমেন্টে আসছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।
- এগুলো খালাসে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে। অপারেশনাল দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ‘সেনসেটিভ ইকুয়েপমেন্ট’ হিসেবে এসব আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ বাংলাদেশ পুলিশকে যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে বলে সরকারি এক নথি সূত্রে জানা গেছে।
- সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ পুলিশের সোয়াতসহ বিভিন্ন ইউনিটকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ সহায়তা অব্যাহত রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের সহায়তা করে আসছে দেশটি। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য প্রশিক্ষণ উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু গাইডলাইনও দিয়ে থাকে তারা। সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি এ দেশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনা ও নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যও তারা দীর্ঘদিন সহযোগিতাটি করে আসছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখার এক নথিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাসিসটেন্স’ প্রোগ্রামের আওতায় চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের এই অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি দেওয়া হচ্ছে। এসব সরঞ্জাম পুলিশের অপারেশনাল দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করবে। আমেরিকান দূতাবাস ঢাকার ইস্যুকৃত ডিপ্লোমেটিক নোট নম্বর-ডি১-১২৫৭৪ মোতাবেক ৯টি শিপমেন্টে এসব আগ্নেয়াস্ত্র আসছে বাংলাদেশে।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ৯২৭৮ নম্বর শিপমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাতে ১৪ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম রয়েছে। এর মার্কিন বাজারমূল্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৬০ ডলার। অস্ত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ৩২টি ৫.৫৬ মিলিমিটারের এম-৪ কোল্ড কারবাইন রাইফেল, ৬৪টি পিস্তল, ৩২টি কনভারসেশন কিট এবং বিপুল পরিমাণ গুলিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম। এই ধরনের আরও আটটি শিপমেন্টে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (অস্ত্র ও গোলাবারুদ) মো. মনিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের বিষয় আছে। এ বিষয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি।
আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের বিষয়ে গত ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের অনুকূলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক এসডি, আরডিসহ সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ মওকুফ করার অনুরোধ করা হলো। এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) ইস্যু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার আমাদের সময়কে বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো পাইনি।
আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশকে সন্ত্রাসবাদীদের গণবিধ্বংসী অস্ত্র মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক টুইটে জানায়, সকল দেশের জনসাধারণকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থেকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্র ও এর অংশীদারদের অন্যতম অগ্রাধিকার। সিআরডিএফ গ্লোবাল ও বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারজনিত অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও ব্যাহত করতে অনুসন্ধানী দক্ষতা অর্জনবিষয়ক সফল কর্মশালার নেতৃত্ব দিতে পেরে গর্বিত।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ ধরনের গুরুতর হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত গণবিধ্বংসী অস্ত্রবিষয়ক কার্যালয় সিভিলিয়ান রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিআরডিএফ) বাংলাদেশ পুলিশকে গ্লোবাল ও থিন ব্লু লাইন, ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। গত ২০ থেকে ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পুলিশের ২৯ জন সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তকারী, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও বোমা বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।
সুত্রঃ আমাদের সময়