২২টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আজ রবিবার এক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন।এতে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বানচাল করে ২০১৮ সালের মতো আবারও ক্ষমতা দখলের হীন উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সিরাজগঞ্জ জেলা ড্যাবের সদস্যসচিব ডা. আতিকুল আলম ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ আজিজ, বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. ফাতেমা, দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ পেশাজীবী ও জাতীয় নেতাদের বিনা অভিযোগ ও ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে গায়েবি মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ডা. এম এ আজিজকে তার মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের পেশাগত চেম্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তিনি রোীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন। ডা. আতিকুল আলমকে সিরাজগঞ্জ, প্রফেসর ফাতেমাকে রাজশাহী এবং ডা. জাহিদুল কবিরকে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুলিশ সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ডা. আতিকুল আলম, ডা. এম এ আজিজ , প্রফেসর ডা. ফাতেমা ও ডা. জাহিদুল কবির জাহিদ চারজনই অত্যন্ত মেধাবী, দক্ষ ও পেশাদার চিকিৎসক। দেশের এই গর্বিত নাগরিকদের অসম্মান, নির্যাতন, নিপীড়ন জাতির জন্য মঙ্গল ডেকে আনবে না। এমনিতেই সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক পরিবেশ না থাকায় দেশের মেধাবীরা এখন দেশে থাকতে চাইছে না। নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র কায়েমের পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা যেভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বিবৃতিতে পেশাজীবী নেতারা বলেন, বিরোধীজোটের কর্মসূচিকে ঘিরে যেভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে তা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, অত্যন্ত নিন্দনীয়। একটা পরিস্থিতি তৈরি করে যেভাবে জাতীয় ও বিরোধী দলের নেতাদের গণগ্রেপ্তার, খুন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নামে গণহারে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে তা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। দেশজুড়ে সরকার একটা ভীতিকর ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সভা-সমাবেশের অধিকার মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। সভা-সমাবেশে বাধা এবং কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের গণগ্রেপ্তার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার পরিপন্থী।’
পেশাজীবী নেতারা বলেন, ‘সরকার দেশ থেকে আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে একটা মগের মুল্লুক কায়েম করেছে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ পুলিশের হাতেই এখন মানুষের জীবন অনিরাপদ। রাষ্ট্রীয় এ বাহিনীকে সরকার দলীয় ঠেঙ্গারে বাহিনীতে পরিণত করেছে। এভাবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হচ্ছে।’
‘আমরা জানি, পুলিশ বাহিনীর মূল দর্শন দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন। এই মূলমন্ত্র নিয়েই পৃথিবীতে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে ,যার সদস্যরা কেবল জনসাধারণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবে। অথচ আমরা এখন দেখছি পুরো উল্টো চিত্র। পুলিশের সামনেই সরকারি দলের অস্ত্রধারীরা ঘুরে বেড়ায় পুলিশ তাদের ধরে না। পুলিশ উল্টো তাদের অপকর্ম করার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। যারা গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তাদের কারও কারও গায়ে পুলিশের পোশাক আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি নির্দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিনা কারণে হত্যা করছে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। বিনা উসকানিত অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ নয়াপল্টনের লাখো মানুষের মহাসমাবেশ পণ্ড করতে যাওয়ায় একজন পুলিশ ও বিরোধীদলের একজন নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে’, যোগ করেন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখতে সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে। পোড়ামাটি নীতি হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ধবংসযজ্ঞ পরিচালনা করা। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত দাবি উপেক্ষা করে পাকিস্তান সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছিল, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ চাই না, মাটি চাই। আজও একই নীতি অবলম্বন করছে সরকার।’
পেশাজীবীদের শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের গণদাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গত দুটি জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন, অধিকাংশ আসনে এমপি হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে ব্যালট বক্স ভর্তি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়। আমরা এর পূণরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’
তারা বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার জনগণকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব। বিরোধী জোটের দাবি হচ্ছে, জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকার ফেরত পান সেজন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরাও এ দাবিকে অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক বলে মনে করি। সরকার যদি জনগনের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করেন তা হলে এই ন্যায়সঙ্গত দাবি মানতে বাঁধা কোথায়?’
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের অন্যায়, ‘অবিচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারছে না। দেশের কোথাও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলা ও গুম এমনকি স্বীকার হতে হচ্ছে। বিশ্বসভার মতামতকেও তারা উপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিরাজ করছে।
দেশের মানুষ আজ এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। আমরা মনে করি, উদ্ভূত শঙ্কটের সমাধান সরকারের হাতেই।,সরকার জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দেওয়ার লক্ষ্যে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই শঙ্কটের সমাধান আসবে। জনগণের দাবি অবৈধ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সরকার যত তাড়াতাড়ি এ দাবি মেনে নেবে, দেশের জন্য ততই কল্যাণকর হবে। তাই জনগণের এ দাবি মেনে নিয়ে দেশকে বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন- বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্যসচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী,
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব সভাপতি প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম মহাসচিব প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাছিন আহমেদ, এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন ও মহাসচিব কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জিয়া পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আহবায়ক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও সমন্বয়ক ডা.জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল ও মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম, এমবিএ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব সভাপতি সৈয়দ আলমগীর ও মহাসচিব শাকিল ওয়াহেদ,জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-জেটে আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম ও সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম রুহুল আমীন আকন্দ, ডিপোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাইফুজ্জামান সান্টু ও মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব) সভাপতি জাহানারা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এম-ট্যাব) সভাপতি এ কে এম মুসা (লিটন) ও মহাসচিব মো. বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ইউনানী আয়ুর্বেদিক গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আগড্যাব) সভাপতি ডা. মির্জা লুৎফর রহমান লিটন ও মহাসচিব ডা. আমিনুল বারী কানন, ডিপোমা এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডি-এ্যাব) সভাপতি মো. জিয়াউল হায়দার পলাশ ও মহাসচিব সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ফিজিওথেরাপিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (প্যাব) সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কল্লোল ও সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীরুল আলম।