সংগঠনের নির্বাচিত প্রাক্তন সভাপতি, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পরও কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে সংস্কার কমিটি গঠন হলে, তার আহ্বায়ক সৈয়দ শাকিল এবং সভাপতি অনন্ত হিরা দুই কমিটির পক্ষ থেকে একসাথে কাজের অঙ্গীকার করেন। এই বিষয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতিটি বুধবার প্রকাশিত হওয়ার মাত্র দুই ঘণ্টা পরে সভাপতি অনন্ত হিরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ডিরেক্টরস গিল্ডের পরিচালকরা জানান, সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই কমিটি একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছিল। তবে আগের নির্বাচিত কমিটি এবং সংস্কার কমিটির মধ্যে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। সবশেষে গত মঙ্গলবারের বৈঠকের পর দুই কমিটির প্রধান যৌথ বিবৃতি দেন। সেই বিবৃতি অনন্ত হিরা নিজেই নাট্য পরিচালকদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন।
অনন্ত হিরা ও সৈয়দ শাকিলের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম চলমান। সংস্কার কাজটি সম্পন্ন করা সংস্কার কমিটির দায়িত্ব হলেও কমিটিকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব কার্যনির্বাহী পরিষদের। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হতে পারে, যেগুলো দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন। সংগঠনের কল্যাণে আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যাব। আসুন আমরা ইতিবাচক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকি।”
এই বিবৃতি প্রকাশের দুই ঘণ্টা পরেই সভাপতির পদত্যাগপত্রে অবাক হয়ে গেছেন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক। কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন, সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। বৃহস্পতিবার সৈয়দ শাকিল বলেছেন, “পদত্যাগের ঘটনাটি আমাদের অবাক করেছে। একটি সংগঠনের অচলাবস্থা সহসাই কাটানো যায় না। তবুও আমরা বসে সমস্যাগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা চাই সংস্কার কাজগুলো এই পেশাদার সংগঠনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। সেভাবেই আলোচনা এগোচ্ছিল। হঠাৎ করেই হিরা ভাইয়ের পদত্যাগের কথা দেখে আমরা অবাক হয়েছি।” তিনি জানিয়েছেন, আজ চারটার পরে একটি জরুরি বৈঠক হবে, সেখানে নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।
ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি কেন পদত্যাগ করেছেন, তা জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও অনন্ত হিরার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি নির্বাহী পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, “ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের একজন গর্বিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ২০২৩ সালের ১০ মার্চের নির্বাচনে তোমাদের আস্থা হেতু সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমি আজীবন তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। শপথ গ্রহণের পর থেকে সংবিধানের প্রতি শতভাগ বিশ্বস্ত থেকে কঠোর পরিশ্রম এবং সততার সাথে আমি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। তোমাদের প্রণীত সংবিধান মোতাবেক নির্ধারিত মেয়াদকালের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের শতভাগ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার জন্য নির্ধারিত ভাগ্য বদলাতে পারে না।”
এই পদত্যাগপত্রে তিনি আরও লিখেছেন, “এজন্য আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। সম্মানিত সদস্যরা, তোমরা আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আমাকে আরও একবার তোমাদের কাছে আমৃত্যু ঋণী থাকার সুযোগ দিও, এই আমার একান্ত নিবেদন। ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি সফল হোক। ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ সম্মানের সাথে শিরদাঁড়া উঁচু করে এগিয়ে যাক, এই প্রত্যাশা রইল।”
ডিরেক্টরস গিল্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বৃহস্পতিবার বলেছেন, “পদত্যাগের বিষয়ে আমরা আগে থেকে কিছুই জানতাম না। একদিন আগেও আমাদের কথা হয়েছে। সেখানে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দিকনির্দেশক কথা হয়েছে। যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। এখন হঠাৎ করেই কেন পদত্যাগের প্রশ্ন এলো, তা বলতে পারছি না। ঘটনাটি আমাদের অবাক করেছে।”
তবে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাবেক একজন নেতা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “একটি সংগঠনে নির্বাচিত কমিটি এবং পরে সংস্কার কমিটি গঠন হলে শুরু থেকেই দুটি কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। কে কার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে, এই প্রশ্নটি উঠছিল। দুই কমিটি সহাবস্থান করতে অস্বীকার করছিল। নির্বাচিতরা সংস্কার কমিটিকে মানতে পারছিল না। অন্যদিকে সংস্কার কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে কাজ করতে গেলেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করছিল সংস্কার কমিটির প্রয়োজন নেই। এই দ্বন্দ্বের কারণে সংগঠনটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”