ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৭ জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সচেতন নাগরিক সমাজ, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন ব্যানারে এসব বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেন, এ ধরনের হামলা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। কোনো সভ্য দেশে কূটনৈতিক স্থাপনায় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতে পারে না। ভারত সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ হামলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে অশান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল বলেও অভিযোগ তোলেন বক্তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীতে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। সেটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে রুহুল কবির রিজভী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশে নিজেদের ‘মাস্টারপ্ল্যান’ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভারত অযাচিত উদ্বেগ ও উগ্রতা প্রকাশ করছে। ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা নেই।
মঙ্গলবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। পতিত ফ্যাসিবাদীরা নানা ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। সে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
চট্টগ্রামে মানববন্ধন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির চট্টগ্রাম নগর শাখা। মঙ্গলবার বিকেলে এ মানববন্ধনে নাগরিক কমিটির নেতারা বলেন, সহকারী হাইকমিশনে হামলা দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ। ভারত সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ হামলা হয়েছে।
রাজশাহীতে মঙ্গলবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। নগরের মালোপাড়ায় ভুবন মোহন পার্ক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এরপর নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে শেষ হয়।
রংপুরেও বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে নগরের গ্রান্ড হোটেল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পায়রা চত্বরে যান দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।
মঙ্গলবার সিলেটে মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে নগরের বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চৌহাট্টা এলাকায় শহীদ মিনারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি।
ফরিদপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারা।
মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে একই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না।
রাজবাড়ীতে মঙ্গলবার জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে রেলগেট শহীদ স্মৃতি চত্বরে যান দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন দলটি।
জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে নোয়াখালীতেও। মঙ্গলবার বিকেলে মাইজদী পৌর বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে গণপূর্ত ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সবাইকে দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
পটুয়াখালীর বাউফলে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জয়পুরহাটে মশালমিছিল হয়েছে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দান থেকে মশালমিছিল শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে জিরো পয়েন্টে পাঁচুর মোড়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থানীয় লোকজন।
ফেনীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে খেলাফত মজলিস। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের ট্রাংক রোডে শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোনো সভ্য দেশে কূটনৈতিক স্থাপনায় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটতে পারে না।
এছাড়াও ফেনীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা ভারতের আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিমের সহবস্থান নষ্ট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বন্ধনে রয়েছে। ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিবাদে আমাদের সনাতনী ভাইয়েরাও মাঠে নেমেছেন। সমাবেশ শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বড় খেজুর চত্বর, মডেল থানা, শহীদ মিনার, ট্রাংক রোড প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।
এদিকে মঙ্গলবার মশালমিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বটতলা এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, এ হামলা দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার শামিল।