জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে জয় বাংলা গেটে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জানান তারা।
দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ অবরোধ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। অবরোধ স্থল থেকে শুরু করে নবীনগর ও সাভার পর্যন্ত রাস্তার দুইধারে শুরু হয় তীব্র যানজট।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করার কারণে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি ও ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পাদিত চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানা তারা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, বাংলাদেশ সরকার কোন রকম স্বার্থ ছাড়া দেশের পানি, গ্যাস, বন্দর ভারতকে দিয়ে দিয়েছে। এই কথা আবরার বলার কারণে সারা রাত পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আবরার যে কথা বলেছে সেটা শুধু তার কথা নয়। বাংলাদেশের সকল মানুষের কথা। আমরা আবরার হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। আবরার হত্যাকাণ্ড কোন নির্দিষ্ট অংশের অংশগ্রহণে হয়নি। আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যেই আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম দেশবিরোধী চুক্তি বাংলার জনগন প্রত্যাখান করেছেন দাবি করে বলেন, আজ সীমান্তে মানুষ হত্যা, সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, নদীর পানির অধিকার, গ্যাস রপ্তানিসহ সবকিছুই দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে এই সরকার। যারা স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না, মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না তাদের আমরা শাসক হিসেবে মানবো না। আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে দেশবিরোধী চুক্তি আপনি করেছেন তার সমুচিত জবাব বাংলাদেশের জনগন, ছাত্রসমাজ দেবে। শেষে বলতে চাই শহীদ আবরার দিচ্ছে ডাক, ভারতীয় আগ্রাসন নিপাত যাক।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কার্যকারী সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে সন্ত্রাসীরা আবরারকে খুন করেছে। ছাত্রলীগ শুধুমাত্র সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরি জয় বলেন, ১৯৭১ সালে এই বাংলার জনগণ স্লোগান দিতো দিল্লি না ঢাকা? আজকে ও আমরা একই স্লোগান দিচ্ছি। দেশ পাল্টেছে কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেনি। পূর্ব বাংলা, বাংলাদেশে হয়েছে কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের সেই ক্ষমতাটুকু আজকে ভারত নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হয়, তাদের পানি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা বাংলাদেশকে চুষে নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে খুন করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।