বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কমিটি হয়নি। কিন্তু ছাত্রলীগ পরিচয়ে ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে কতিপয় ছাত্রের বিরুদ্ধে। হলের কক্ষ অবৈধ দখল, মাদক সেবন, ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে নিরীহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে স্ব-ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। তাদের দুঃসহ নির্যাতনের মুখে পড়ালেখা অসমাপ্ত রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন এক শিক্ষার্থী এমন নিদর্শনও আছে।
দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় কথিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস পায় না কেউ। যদিও শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, ছাত্রলীগের পরিচয়ে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায় গণিত তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত, সমাজ বিজ্ঞান ৪র্থ বর্ষের আলীম সালেহী, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৫ম ব্যাচের মো. হাফিজ, ভূ-তত্ত্ব বিদ্যা বিভাগের ৭ম ব্যাচের রাদ, নাওয়ার, শান্তসহ অন্যরা। তাদের নেতা শিফাত কোতোয়ালি যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোল্লা শামীমের ছেলে। শিফাত এখনো গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্থানীয় বাসিন্দা হলেও থাকেন বঙ্গবন্ধু হলের ৩০০৫ নম্বর কক্ষে। শেরেবাংলা হলের নাট্য মঞ্চের জন্য বরাদ্দকৃত ১০০১ নম্বর কক্ষটি জবরদখল করে অনুসারী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিফাতের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু হলের ৩০০৫ নম্বর কক্ষ এবং শেরেবাংলা হলের ১০০১ নম্বর কক্ষ মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছেন তারা। এই দুই কক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ সবার মুখে মুখে।
ঈদুল আজহার দিন শিফাতের কক্ষে একজন নারী (বান্ধবী) দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। সম্প্রতি এক ছাত্রীর একটি অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে ওই ছাত্রীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। ক্যাম্পাস থেকে রূপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচলরত ১৫টি অটোরিকশা থেকে শিফাত চাঁদা আদায় করছে নিয়মিতভাবে।
সম্প্রতি টার্মিনালে শিফাত ও তার সহযোগীরা শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয় ও একটি কাউন্টার ভাঙচুরসহ ৩ শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ করেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। ৩ সপ্তাহ আগে রূপাতলী হাউজিংয়ের মেস থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী অনুপম এবং শরীফুল ও সোহাগকে তুলে বালুরমাঠে নিয়ে নির্যাতন চালায় শিফাত বাহিনী। নির্মম নির্যাতনের পর লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যান অনুপম।
তার আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেরেবাংলা হলে ঢুকে রাজু এবং রাজীব নামে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিফাত ও তার সহযোগীরা। ভিসি বিরোধী আন্দোলনের শেষ দিন ৩০ এপ্রিল হলে ঢুকে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে মহিউদ্দিন শিফাত ও তার সহযোগীরা। ইয়াবা-গাঁজাসহ গ্রেফতার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফাত নিজেকে শিফাতের অনুসারী বলে পরিচয় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সদ্য ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, আবরার মারা যাওয়ায় ক্যাম্পাসগুলো আলোচনায় এসেছে। এমন ঘটনা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। দুই বছরে তুচ্ছ ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে দেওয়াসহ অন্তত ১০টি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়নি।
বরিশাল বিশববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, আবাসিক হলের যে কোনো অভিযোগ প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে আসলে সেগুলো আবার ভিসির মাধ্যমে প্রভোস্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা ব্যবস্থা নেন। হলের বাইরের বিষয়গুলো প্রক্টোরিয়াল বডি দেখে। সাম্প্রতিক সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দায়ে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং অন্তত ৫ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।