চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে আটক করেছে র্যাব। শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
কাউন্সিলর তারেকুজ্জামানকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান। যদিও শুরুতে র্যাবের পক্ষ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছিল।
শনিবার রাতে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে রাখে র্যাব। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশের ৮নং সড়কের ৪০৪ নং ওই বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব-১ এর একটি দল। ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্ত ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজীব ওই বাসায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে র্যাব।।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাড়িটি ঘিরে রাখা হযেছে। এটি চার নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাড়িতে মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব রয়েছেন।
জানা যায়, আগে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাজীব চলাফেরা করতেন। এখন কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েন। নতুন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনার নেশা রয়েছে তার। যেখানেই যান, তার গাড়িবহরের সামনে-পেছনে থাকে শতাধিক সহযোগীর একটি দল। এসব কারণে মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজীব যুবরাজ হিসেবেই পরিচিত।
২০১৪ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পরই যুবলীগের এই নেতার অবস্থা বদলে যেতে থাকে। এই কয়েক বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। রাজীবের সব অপকর্মের সঙ্গী যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবন, সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, ফারুক ও রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই ইমতিহান হোসেন ইমতিসহ অর্ধশত ক্যাডার।
জানা গেছে, কাউন্সিলর হওয়ার পর রাজীবের লোকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা পাইন আহমেদকে মারধর করে। ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী জানার পর মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় রাজীবকে। কিন্তু পরে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এমনকি তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সদ্য বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের মাধ্যমে এক কোটি টাকা দিয়ে পদটি নিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই খুব বেশি দেখা যায় না রাজীবকে। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর গডফাদারসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ অনেকের বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাসি করে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ক্যাসিনোয় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০১ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়োদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।