যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী দলের নেতাকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন যুবলীগ নেতারা।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে এমন অভিযোগ করেন নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সভায় উপস্থিত যুবলীগের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, আসন্ন সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস আয়োজন নিয়ে ডাকা এই বৈঠকে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন অধিকাংশ নেতারা। নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, উনি (ওমর ফারুক) আমাদের সঙ্গে ঠিকভাবে কথাই বলেন না। বাসায় গেলে অথবা অফিসে দেখা হলেও দুর্ব্যবহার করতেন। অধিকাংশ সময় আমাদের সঙ্গে অশোভন, অশালীন ও অরাজনৈতিক আচরণ করতেন।
যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে আমাদের সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। ওই দুই নেতা বলেন, জেলা থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত উনি ইচ্ছে মতো কমিটি দিতেন, কাউকে জিজ্ঞেস করতেন না।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি বলেই তো ব্যবস্থা নিচ্ছি। এইটা এখন নতুন করে কেন বলছো? আগে তো কেউ বলোনি।
জবাবে ওই দুই নেতা বলেন, আমরা সাহস ও সুযোগ কোনোটাই পাইনি। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে বললে বুঝতাম সাহস করে বলেছো। তোমরা কি কাদেরকে বলেছো? বা অন্য কোনো সিনিয়র নেতাকে বলেছো?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষ করার পর যুবলীগের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্যে দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে সম্মেলন। এখন নিয়মিত মিটিং করতে হয়। সেই সব মিটিংয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকেন না। প্রস্তুতি কমিটি দরকার। আমাদের জাতীয় কংগ্রেসে কাউকে তো সভাপতিত্ব করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আপনার নির্দেশনা চাই।
এ সময় তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়াই হলো। এখন এই সব বাদ দাও। ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মেলনটা করো সংগঠন শক্তিশালী হবে, সুশৃঙ্খল হবে।
এ সময় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব ও কার্যনিবাহী সদস্যকে নিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই কমিটি আগামী সম্মেলন পর্যন্ত সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবে। বিতর্কিত কাউকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে রাখা যাবে না।
যুবলীগের নেতা হতে ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হলে তখন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান ও ফারুক হোসেন বয়সসীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করেন।
যুবলীগের এ দুই নেতার এমন কথার প্রেক্ষিতে বৈঠক উপস্থিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুবলীগের বয়স যুবকের বয়স হতে হবে। নেত্রী সব দিক বিবেচনা করেই বয়সের কথা বলেছেন।
পরে শেখ হাসিনা বলেন, সারা জীবন যুবলীগ করতে চাও? সব কিছুর একটা বয়স থাকা উচিত। যুবলীগের নেতা হতে ৫৫ বছর বয়স নির্ধারণ করা উচিত। যারা বুড়ো হয়ে গেছো তারা জেলায় যাও। জেলায়ও রাজনীতিবিদ দরকার আছে।
যুবলীগের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, শহীদ সেরনিয়াবাত, সুব্রত পাল, মহিউদ্দিন মহি, আবদুস সাত্তার মাসুদ, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, ফারুক হোসেন।