fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ ১৩ টি কক্ষ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ ১৩ টি কক্ষ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) চারটি আবাসিক হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ প্রায় ১৩টি কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও সেভাবে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৩০০১, ৫০০৩, ৩০৩, ৫০১, ৫০২, কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৪০১, ৪০৬, ৫০৫, ৫০৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০৮ ও ৩০৫, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ৫১০ ‍ও ১১৩ নম্বর কক্ষ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আছে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ‘গণরুম’।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন থেকে বাদ পড়ে না নিজ দলীয় নেতাকর্মীও। কোনো বিষয়ে দ্বিমত কিংবা অন্য কোনো গ্রুপের হলেই মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়াসহ নানাভাবে চলে ছাত্রলীগের এ নির্যাতন! আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির কিংবা ছাত্রদল আখ্যা দিয়ে মারধর করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে হলের টিভি রুমে অথবা সিনিয়র নেতাদের কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে চলে ম্যানার শেখানো ও র‌্যাগের নামে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন। কেউ সহ্য করে ঠিকে গেলেও অনেকেই হল ছেড়ে উঠে গিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ছাত্রাবাসে।

কোনো কোনো সময় হলগুলোর প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সভাপতির কক্ষে (৩০০১) নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।

২০১৭ সালের ১৬ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন নাবিল, ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও জয়নাল আহমেদকে সভাপতির কক্ষে ডেকে নিয়ে সারারাত ধরে চলে এ নির্যাতন।

জসিম উদ্দিনকে বৈদ্যুতিক শক এবং অন্যদের লাঠি, বৈদ্যুতিক তার, রড দিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ, ছাত্রলীগ নেতা হাসান বিদ্যুৎসহ শাখা ছাত্রলীগের ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে।

মারধরের শিকার হওয়া ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন নাবিল বলেন, ‘শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করার পরে আমরা সভাপতির কক্ষে গেলে আমাদের উপর রাতভর অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে ওইদিনই ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হই।’

মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে কুবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘কারণ ব্যতীত কখনও কাউকে মারা হয়নি। সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেই।’ তবে নিজ কক্ষে বিভিন্ন সময়ে নেতাকর্মীদের বিচার করার বিষয়টি স্বীকার করলেও নির্যাতন করার বিষয়টি ঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সূত্র আরও জানায়, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের কক্ষে (৩০১) চলে শিবির-ছাত্রদল নিধন নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মারধর করা হয়। এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। তার কক্ষেই ২০১৭ সালের ৫ জুন মামুন চৌধুরী (গণিত, ৭ম ব্যাচ) ও পরিসংখ্যান ৮ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে শিবির আখ্যা দিয়ে মারধর করা হয়।

এছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমন, রাশেদ ও শিশির শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক তারেকুল ইসলামের ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাসানকে হলটির ৫০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করে রাইহান ওরফে জিসান, জয় বড়ুয়া, শাহ আমানুল্লাহ পরাণসহ আরো কয়েকজন।

২০১৬ সালে লোকপ্রশাসন বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর তমালকে এই হলের ৪০১ নম্বর কক্ষে ডেকে মারধর করে হাত ভেঙে দেন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম দস্তগীর ফরহাদ ও কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাদী।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু হলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয় ছাত্রলীগ নেতা কাউসার আহমেদকে। তাকে ওই কক্ষে নিয়ে লাইট বন্ধ করে বেধড়ক পেটানো হয়।

এ বিষয়ে কুবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বিরোধীদের চক্রান্ত। আমার কক্ষে কাউকে কখনও মারধর করা হয়নি। যারা সংগঠন বিরোধী কাজ করেছে তাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগই শাস্তি দিয়েছে।

যদি কেউ এমন অভিযোগের প্রমাণ কেউ দিতে পারে তিনি ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নেবেন বলেও জানান মাজেদ।

অভিযোগ রয়েছে, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলটির কোনো ছাত্রী হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের কথা না মানলে তাদের বিশেষ কক্ষে ডেকে নিয়ে শাসানোসহ মারধর করা হয়।

হল সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হলের ডাইনিং ম্যানেজার লিপি আক্তারকে ৫১০ নম্বর কক্ষে নিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মারধর করেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভি রহমান, ছাত্রলীগ নেত্রী ইসরাত জাহান জেরিন, অপর্ণা নাথ, আশা আফরীনসহ আরো কয়েকজন। এমনকি হল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকিও দেওয়া হয়েছে অনেককে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘যখনই কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেছে এবং আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। এমনকি উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টাও করেছি। এখানে কোনো দলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।’

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments