‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ইতিহাস তৈরি করায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।’
বুধবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তুরষ্কের আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তুরস্ক ৪ মিলিয়ন শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আর বাংলাদেশ ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। পৃথিববীর অন্যতম প্রধান জনবসতিপূর্ণ একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটির কারণে এটা এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই।
এচাড়া যেকোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তুরস্ককে সহায়তা করারও অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হলেও এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বাড়ছে জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জও। যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তুরস্কের গ্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দেশ। যে দুটি কারণে তুরস্ক সারাবিশ্বে অত্যধিক সমাদৃত তার একটা হলো অসাম্প্রদায়িকতা আর অন্যটি হলো জঙ্গিবাদের কারণে বিশ্বের কোথাও কোনো মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের এই নীতিতে অত্যন্ত সামাঞ্জস্য রয়েছে কেন না বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূরত্ব অনেক হলেও দুই দেশের মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতিসহ অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রয়েছে। আমি আপনার এই সফরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আশা করছি সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসু হবে। রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উদারতার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আরাকানের এই মুসলিমদের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে সেটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তুরস্ক এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
তিন দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, শিপ বিল্ডিং, শিল্প, কর্মসংস্থান, নৌ-পরিবহন, কৃষি, শিক্ষা, নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও বিমান পরিবহন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি-ট্যুরিজম, ডেভলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পাট-টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য তুরস্ককে অনুরোধ করা হয়েছে।