যাত্রীবাহি বাস ও বরযাত্রী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয়জনসহ মাইক্রোবাসের ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংবাসী। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর থেকে পুরো লৌহজং উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এনেছে। শোকে পাথর হয়ে পড়েছে নিহতদের স্বজনরা।
এই দুর্ঘটনায় এলাকাবাসী নিরাপদ সড়কের দাবি তুলে সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেস। এদিকে, শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বরযাত্রীর মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আগামী ৭দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।
ঢাকার কামরাঙ্গিরচরের আলীনগর এলাকার আব্দুর রশিদের মেয়ে নিশির সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামের আব্দুর রশিদ বেপারীর ছেলে মো. রুবেল হোসেনের বিয়ে দিনক্ষণ ছিলো শুক্রবার। বিয়ের কাবিন করতে দুইটি মাইক্রোবাস নিয়ে কামরাঙ্গিরচরের উদ্দ্যেশে কনকসার গ্রাম থেকে শুক্রবার দুপুর পৌনে একটার সময় রওনা দেয় বরযাত্রী। দুপুর পৌনে ২টার সময় ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ওভারটেক করতে গিয়ে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসের উপরে গিয়ে পড়লে দুমরে মুচরে যায় ঢাকার কামরাঙ্গিরচর গামী বরযাত্রী বহনকারী মাইক্রোবাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৬ জন, শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন এবং ঢাকায় হাসপাতালে নিহত হয় আরো ১ জন। দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক বিল্লাল হোসেনও নিহত হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন এবং পঙ্গু হাসপাতালে ১ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছে, বর রুবেলের বাবা আব্দুর রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪), ভাগনী তাবাসসুম (৫), বড় ভাই সোহেলের স্ত্রী রুনা (২৪), ভাতিজা তাহসান (৩), ভাইয়ের শ্যালিকা রেনু (১০) এবং প্রতিবেশি মফিজ বেপারী (৬৫), কেরামত বেপারী (৭০) ও মাইক্রোবাস চালক বিল্লাল (৪০)।
এ ঘটনায় পর নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সময় না দিলে হয়তো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। তারা নিরাপদ সড়কের দাবি তুলেন এবং সড়ক পরিবহন আইনটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান।
এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ সুপার জিসানুল হক বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গতির কারনেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কে দায়ী তদন্ত না করে তা আমরা বলতে পারবো না। তদন্ত করে যে দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুর্ঘটনার দিন শুক্রবার রাতেই হাইওয়ে পুলিশের টিএসআই দেলোয়ার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বাস চালকের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
দুর্ঘটনার যে মামলা হয়েছে তার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. শাহজাহান জানান, বাসচালক ও মালিক পলাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্দুল বাসেদ জানান, শুধু বাসচালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তদন্তে যদি বাস মালিকের গাফিলতি পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন বাসচালককে খুঁজছি। মাত্র তো একদিন পার হয়েছে। বাসের মালিক ও চালকের নাম আমরা জানতে পেরেছি। শিগগির বাসচালকে আটক করা হবে।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনায় নিহত নয় জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লৌহজং উপজেলার কনকসার বটতলা গ্রামের বাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হলদিয়া সাতঘড়িয়া কবরস্থানে ৭ জনকে দাফন করা হয়। একজনকে দাফন করা হয় কাহেরতারা কবরস্থানে ও মাইক্রোবাস চালক বিল্লালকে শ্রীনগরে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।
জাহাঙ্গীর নামে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত জাহাঙ্গীর বর রুবেলের ফুফাতো ভাই হয় বলে জানিয়েছেন তার চাচাত বোনের জামাই আব্দুর রউফ।