যুক্তরাষ্ট্রে দুটি কলেজের ডিনকে বোমা মেরে হত্যাসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকায় সালমান রশীদ নামের এক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ বছর বয়সী ফ্লোরিডার বাসিন্দা সালমানকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার (২৫ নভেম্বর) আদালতে সোপর্দ করা হয়।
নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জঙ্গিগোষ্ঠী আইসিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন সালমান। সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের প্রসিকিউটর সোমবার মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত বছরের নভেম্বরে মায়ামি ড্যাড কলেজের এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে প্রেম নিবেদনের পর সাড়া না পেয়ে তাকে হেনস্থার চেষ্টা করেন সালমান। এ অভিযোগে তাকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সালমান ভর্তি হন নিকটস্থ ব্রাওয়ার্ড কলেজে। সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছেও একই অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী। এরপর সেই কলেজ থেকেও সালমানকে বহিষ্কার করা হয়।
ফেডারেল প্রসিকিউটর আরও বলেন, ইতোমধ্যেই সালমানের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী এফবিআই তদন্ত শুরু করেছিল যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক রয়েছে। ফেসবুকে সালমান স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে, তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নিগৃহীত করার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকায় বড় ধরনের একটি হত্যাযজ্ঞ চালাতে আগ্রহী।
সালমান ওই ছাত্রীকে লিখেছিলেন, ‘প্রথম দেখার পরই তোমার ব্যাপারে আমার অন্যরকম একটি ধারণা জন্মেছে। এখন আমি তোমাকে জানাতে চাই যে, তুমি হচ্ছো আমার বাকি জীবনের অর্ধাংশ। তাই আবার যখন দেখা হবে অবশ্যই তুমি আমার সান্নিধ্যে আসবে। এটি করতে তুমি বাধ্য।ছাত্রীটি কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ করেন যে, সালমান তাকে অনবরত চিঠি দিচ্ছে, মেসেজ পাঠাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কলেজ থেকে গাড়িতে ওঠার সময়েও পিছু নিচ্ছে সালমান।
ছাত্রীটি কর্তৃপক্ষকে জানান যে, ফেসবুকে সালমান যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা তাকে ভীত করেছে এবং নিজেকে কখনই তিনি নিরাপদ ভাবছেন না। সালমানকে কোর্টে সোপর্দ করার পর জামিন অযোগ্য আটকাদেশ দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
আগামী মাসে তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে পরবর্তী প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্যে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে সালমানকে মায়ামি ড্যাড কলেজ থেকে এবং এ বছরের মে মাসে ব্রাউয়ার্ড কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।এদিকে এফবিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সালমানের ফেসবুকের স্ট্যাটাস অনুযায়ী ছদ্মবেশী এফবিআই কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে সময়ে সালমান জানায় যে, তিনি আইসিসের এক্সপার্ট ব্রাদার খুঁজছেন মায়ামিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্যে। এক পর্যায়ে এ মাসেই সালমান তাদেরকে (এফবিআইয়ের এজেন্টদের) জানান যে, উপরিউক্ত দুই কলেজের ডিন হচ্ছেন তার টার্গেট, যারা তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছেন। দুই ডিনের নামও প্রদান করেন সালমান। তাদের অফিসের রুম নম্বরসহ বিস্তারিত ঠিকানাও প্রদান করেন সালমান। ‘তারা উভয়েই ইসলামকে ঘৃণা করে। তারা দুজন যদি মারা যায় এবং যারা তাদেরকে হত্যা করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক পুরস্কৃত হবেন। এজন্যই মরতে হবে।
সালমান উল্লেখ করেছেন, তারা দুজন শুধু তার দুশমন নন, ইসলাম এবং আল্লাহর দুশমন।ছদ্মবেশী এফবিআই এজেন্টকে সালমান ভেবেছেন বোমা প্রস্ততকারক হিসেবে। তাই সালমান জানিয়েছেন কলেজ প্রাঙ্গণে হামলার ভালো সময়ের কথাও। যখন নিরাপত্তা রক্ষার অবস্থান খুবই দুর্বল হয়, তখনই হামলার উত্তম সময় বলেও উল্লেখ করেছেন সালমান। ‘তাই এ অপারেশন খুব একটা কঠিন কাজ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন সালমান। এই দুজনকে হত্যার সময় আরও বেশি মানুষ নিহত হলেও ক্ষতি নেই, কারণ তাদের ইসলামের শত্রু-মনে করেন সালমান।সালমানের জন্ম কিশোরগঞ্জে। সে মা-বাবার আগ্রহে মায়ামির একটি মসজিদে যাতায়াত করেছেন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্যে।
পরবর্তীতে কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকেও ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সালমান জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয় বলে প্রবাসীরা মনে করছেন।প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সালমানের সন্ত্রাসী কাজে প্রবৃত্ত হবার এ সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে ফ্লোরিডাসহ আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কলেজ-ভার্সিটিগামী ছেলে-মেয়েরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন।