ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জের ধরে ইরাক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন। সেই বিদ্রোহের আগুন প্রতিহত করতে যেন আগ্নেয়াস্ত্রই একমাত্র ভরসা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। বৃহস্পতিবার বাগদাদ, নাজাফ ও নাসারিয়া শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে কমপক্ষে ৮২ জনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা ও আরব নিউজ।
প্রথম গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজাফ শহরে। সেখানে বুধবার রাতে ইরানের কন্স্যুলেট ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে দেশটির সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হঠাতে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে এক বিক্ষোভকারী নিহত এবং আরো ৩৫ বিক্ষাভকারী নিহত হন। এ ঘটনার পর ওই শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানী বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এতে নাজাফে ৪৫, নাসিরিয়ায় ২৯ এবং বাগদাদে কমপক্ষে আটজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এসব সহিংসতায় আহত হয়েছে আরো শত শত মানুষ। কেবল নাসারিয়া শহরেই আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৩৩ জন বিক্ষোভকারী।
ইরাকের নিরাপত্তা ও সামরিক নেতাদের বরাত দিয়ে আরব নিউজ বলছে, ইরানি কনস্যুলেটে অগ্নিসংযোগের জের ধরে বৃহস্পতিবার এত ব্যাপক বিক্ষোভ এবং হাতহতের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে দেশ জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় দেশটির নতুন সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিল আল-শাম্মারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, নিয়োগ দেয়ার মাত্র একদিন পরই বরখাস্ত হলেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
ইরাকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরের সড়কগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত কমপক্ষে সাড়ে ৩শ জন নিহত এবং আরো হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এসব হতাহতদের অধিকাংশই বিক্ষোভকারী। তবে ইরাকে একদিনের বিক্ষোভে এত বেশি সংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
নাসিরিয়ায় সেনাবাহিনীর সহিংসতা সম্পর্কে সেখানকার ৩২ বছর বয়সী এক আইনজীবী আল জাজিরাকে বলেন,‘গত চারদিন ধরে আমরা শহরের সড়ক ও সেতুগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছি। বৃহস্পতিবার সেনারা এগুলোর দখল নিতে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে রক্তে ভাসছে গোটা শহর। বিক্ষোভ দমনের নামে নাসিরিয়ায় যা হয়েছে তা কল্পনা করা যায়না। কিন্তু এভাবে সেনারা আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। এখন ন্যায়বিচারের দাবিতে আরো বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে।’