নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের পাশের ফুটপাতে হকার বসতে না দেওয়া কেন্দ্র করে নাসিক মেয়র আইভী ও তার অনুসারীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের ঘটনার ২ বছর পর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএমএ সাত্তার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালতে মামলার আবেদন করেন। নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ওই ঘটনায় হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল- এমন অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৯ নেতার নাম উল্লেখ করে প্রায় এক হাজার জনের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়।
বিষয়টি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানার ওসিকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের হলে এটি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রকাশ পায়।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) আসাদুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, আদালত বাদীর আর্জি গ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত বিবাদীরা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট ও গায়েব করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন তিনি।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নগরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের দু’পাশের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তার অনুসারীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মেয়রসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। ওই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর যে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তাদের দেওয়া লিখিত অভিযোগ পুলিশের দায়ের করা মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ আসামির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তও শুরু করেছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলামকে। অন্যান্য আসামি হলেন- নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, নগর যুবলীগ সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ৯শ’ থেকে ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে সংঘর্ষের ওই ঘটনার চার দিন পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন মেয়র। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান করা হয় তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারকে। এ ছাড়াও কমিটিতে রাখা হয় তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান ও র্যাব-১১ এর সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আখতারকে। তবে, অজ্ঞাত কারণে ওই তদন্ত রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।
মামলার বিষয়ে আসামি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।