পাবনায় ঈশ্বরদী উপজেলার লালন শাহ ব্রিজের টোল প্লাজা এলাকায় সুপার সনি পরিবহন বাসের যাত্রীর সাথে ভাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে বাসযাত্রী হোটেল শ্রমিক মো. সুমন হোসেনকে (৩৪) চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা সে হত্যা মামলায় ঈশ্বরদী থানা পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত দুইজন ‘সুপার সনি পরিবহন’ নামের ওই বাসের সুপারভাইজার রোকনুজ্জামান (২৮) ও চালকের সহকারী (হেলপার) নাসিম উদ্দিন (২২)। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। শনিবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সচেতন বার্তাকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই তাদের গ্রেফতারের জন্য থানার একাধিক টিম তৎপর ছিল। রাত ৮টার দিকে ঈশ্বরদী দিয়ে পালানোর সময় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, শনিবার দুপুরে নিহত সুমনের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সুপার সনি পরিবহন এর উক্ত বাসের চালক ও দুই সহকারীকে আসামি করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সুমন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রূপপুর থেকে ভেড়ামারা যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মেহেরপুরের গাংনীগামী সুপার সনি পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। এ সময় বাসের চালকের সহযোগীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চালকের দুই সহযোগী তাঁকে মারধর করেন। বাসটি লালন শাহ সেতুর পাকশী টোল প্লাজা পার হতেই দুজন তাঁকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ সময় চালক তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যান। চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন। হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে তিনি মারা যান।
নিহত সুমনের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের ঝাউতলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ির পাশে বাসা ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন। পাকশীর রূপপুর মোড়ে একটি খাবার হোটেলে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন।
নিহতের চাচাতো ভাই লিটন ও তার স্ত্রীর বড় ভাই শফি হোসেনের সাথে সচেতন বার্তার স্থানীয় প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, নিহত সুমন পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার দুইটি সন্তান, এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেটি অষ্টম শ্রেণি ও মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সুমনকে হত্যা করে অপরাধীরা পরিবারটিকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।
নিহত সুমনের স্ত্রী এই অবস্থায় দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন মন্তব্য করে তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সোচ্চার ভূমিকার অনুরোধ জানান।