fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধএমপি পাপুলের ২৫ কোটি টাকার সম্পদ সিলেটে

এমপি পাপুলের ২৫ কোটি টাকার সম্পদ সিলেটে

লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এখন বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে আলোচিত এক চরিত্র। মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে কুয়েতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, গালফ টাইমসসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব প্রভাবশালী গণমাধ্যমেই শিরোনাম হয়েছেন এমপি পাপুল।

পাপুল বর্তমানে কুয়েতের কারাগারে আছেন। সে দেশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর তার জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশেও পাপুলের সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সিলেট নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা নাইওরপুল মোড়ে তিনি ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকার জায়গা রয়েছে। আর ব্যাংকে তার বিপুল অর্থ থাকার কথা আগেই প্রকাশিত হয়েছে।এমপি পাপুল কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থার কাছে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করে কুয়েতে তার সহযোগীদের নাম এবং ঘুষ দেওয়ার তথ্যও প্রকাশ করেছেন। অপরাধ স্বীকারের পর পাপুলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মারাফি কুয়েতিয়া’র অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার জন্যও উদ্যোগ নিয়েছে কুয়েত সরকার।

জানা গেছে, এমপি পাপুলের পরিবার মূলত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দেশে তার ব্যবসাও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে। অথচ এই পাপুলই ২০১৬ সালের পর হঠাৎ ধূমকেতুর মতো লক্ষ্মীপুরের রাজনীতিতে এসে বড় ধরনের চমক সৃষ্টি করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী না হলেও লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

এমনকি কুয়েতে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও ‘কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এমপি সমর্থক গোষ্ঠী’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে লক্ষ্মীপুরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা পাপুলের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। এই ফেসবুক পেজে এমপি পাপুলের স্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, এমপি পাপুলের প্রতিষ্ঠান ‘মারাফি কুয়েতিয়া’

কুয়েতে বেশ কয়েকটি সরকারি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। ফলে সেদেশের কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ তার প্রতি নাখোশ হয়। একই সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে তার জনকল্যাণমূলক ভূমিকায় দ্রুত জনপ্রিয়তায় একটি মহলও ব্যাপক ঈর্ষান্বিত এ কারণে কুয়েত ও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যৌথভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যার ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে অপবাদ চলছে।

জানা গেছে, পাপুল লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও সিলেটেও তার সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেছিলেন। সংশ্নিষ্টরা জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পাপুল ১৯৮৯ সালে ভাগ্যান্বষণে কুয়েতে যান। সেখানে তার বড় ভাই কাজী মঞ্জুরুল আলম ছিলেন। এলাকায় মঞ্জুরুল আলম যুবদলের নেতা ছিলেন বলে জানায় স্থানীয়রা। পাপুল সরাসরি রাজনীতি না করলেও ভাইয়ের রাজনীতিরই সহযোগী ছিলেন। মঞ্জুরুল কুয়েতে গিয়েও বিএনপির রাজনীতি চালিয়ে যান। কুয়েত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদও লাভ করেন তিনি। ভাইয়ের সহায়তায় কুয়েতে একটি পরিচ্ছন্নতা কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি পান পাপুল। প্রায় এক বছর চাকরির পর ১৯৯০ সালের শেষের দিকে ইরাকের কুয়েত দখলের কারণে পাপুল দেশে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯২ সালে পাপুল আবার কুয়েতে যান।

এরপর তিনি ধীরে ধীরে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘আদম ব্যবসায়ী’ হিসেবে। নিজের এলাকা লক্ষ্মীপুর ছাড়াও শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লার মেঘনা এলাকায় তিনি আদম ব্যবসা চালিয়ে যান। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে কুয়েতের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তিনি গত দুই দশকে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে কুয়েতে নিয়ে গেছেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে নিয়েছেন।দেশেও সাম্রাজ্য বিস্তার :এমপি কুয়েত ছেড়ে দেশে নিজের রাজত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়। দেশে রাজত্ব গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম। সিলেটের নাইওরপুল মোড়ে তিনি ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নামে ৪৯ শতক জায়গা রয়েছে এই দম্পতির।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই জায়গা সিলেটের ব্যবসায়ী আতাউল্লাহ সাকেরের কাছ থেকে কিনেছেন পাপুল। এখানে একসময় সিএনজি পেট্রোল পাম্প চালু করেছিলেন সাকের। কিছুদিন সেটি চালু থাকার পর বন্ধ করে দেন। দীর্ঘদিন জায়গাটি পরিত্যক্ত থাকার পর ২০১২ সালে এমপি পাপুল তা কিনে নেন। এখনও জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

জায়গার সাবেক মালিক সাকের জানান, এমপি পাপুল নিজে ও তার স্ত্রীর নামে ২০১২ সালে জায়গাটি কিনে নেন। কত টাকায় বিক্রি করেছেন তা স্মরণে নেই বলে জানান সাকের। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আহমদ দৌলত সমকালকে বলেন, জায়গাটি ১২-১৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বর্তমানে ওই জায়গার দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আমরা জানতাম না এই জায়গার মালিক কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি পাপুল। এখন জেনে অবাক হচ্ছি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমপি পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ‘কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এমপি সমর্থক গোষ্ঠী’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে তাকে দানবীর এবং রাজনীতিতে মহান ব্যক্তি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। গত সোমবার এই ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও কনফারেন্স করা হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কথা বলেন। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন রায়পুর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজী জামশেদ কবীর বাকী বিল্লাহ। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল পাঠানসহ সাত নেতা বক্তব্য দেন। তাদের মুখে একটাই কথা ছিল, পাপুল এলাকায় এবং দেশে কল্যাণমূলক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছিলেন। তিনি এখন ষড়যন্ত্রের শিকার।
ফেসবুকের এই পেজে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। তাতে সেলিনা বলেন, তার স্বামী কুয়েতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি খ্যাতনামা মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও। এই কোম্পানিতে কুয়েতি অংশীদারত্ব রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কুয়েতের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। পাপুল একজন গর্বিত রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments