fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধরাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ ব্র্যান্ডের মদের ‘চিফ কেমিস্ট’!

রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ ব্র্যান্ডের মদের ‘চিফ কেমিস্ট’!

একসময়ের ভাঙাড়ি দোকানের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করাই ছিল যার পেশা। এখন তিনি রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ ব্র্যান্ডের নকল মদের কারখানায় ‘চিফ কেমিস্ট’। চাঁদপুরের জাহাঙ্গীর আলম রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ ও ইংলিশ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের নাম করে তিনি মূলত স্পিরিট, রং আর ভাত পচানো পানি দিয়ে বানাতেন বিষাক্ত মদ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, ‘নিরক্ষর এ দোকানদারই বনে যান বিদেশি মদ তৈরির কারখানার প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা। মূর্খ এ ভাঙাড়ি দোকানদার এভাবেই চড়া মূল্যে মদ্যপ এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দিতেন মদ নামক বিষ।’

সোমবার রাতে রাজধানীর ভাটারা থেকে গ্রেফতার হন জাহাঙ্গীর আলম। একই সময় চলা অভিযানে ভেজাল মদ তৈরির কারখানা থেকে গ্রেফতার  হন মনতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশ, রেদুয়ান উল্লাহ, সাগর বেপারী, নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল ও সৈয়দ আল আমিন নামে আরও পাঁচজন।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানান, গত কয়েক দিনে ভাটারায় তিনজন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একজন ও মোহাম্মদপুরে দুজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে আলোড়ন ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকেই মদপানের পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। বিভিন্ন থানা এলাকায় একাধিক মামলাও হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভেজাল অবৈধ মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, সোমবার রাত পৌনে ৯টায় তেজগাঁওয়ে ইয়ানতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে মনতোষ চন্দ্র অধিকারী ওরফে আকাশ, রেদুয়ান উল্লাহ ও সাগর বেপারীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যে ভাটারার খিলবাড়ীর টেক এলাকার একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় নকল মদ তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। সেখানেই হাতেনাতে ধরা পড়েন চিফ কেমিস্ট জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও কারখানার মালিক নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল ও ম্যানেজার সৈয়দ আল আমিন। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নকল বিদেশি মদ, খালি মদের বোতল, কর্ক, স্টিকার, স্পিরিট, কৃত্রিম রং, সিলগালার সামগ্রী, হলোগ্রামসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। চক্রের হোতা নাসির দীর্ঘদিন ধরেই মদ বিক্রি করে আসছেন। মাঝেমধ্যে টিউনিং করে একটি মদের বোতল থেকে দু-তিনটি বোতল তৈরি করতেন।

সম্প্রতি ওয়্যারহাউসগুলো থেকে মদ কেনায় কড়াকড়ির কারণে বাজারে সংকট তৈরি হয়। এ সুযোগে চক্রটি নকল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। নকল কারখানার মালিকরা মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রং সংগ্রহ করে চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মদ তৈরি করেন। এরপর ম্যানেজার আল আমিন বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে সেবনকারী পর্যায়ে বিক্রি করতেন। ডিবি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় রেদুয়ান ও মনতোষ মোটরসাইকেলে করে ২৮ জানুয়ারি ১ বোতল মদ দিয়ে যান। এ মদপানেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ঢাকায় যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে তারা প্রত্যেকে ওই নকল কারখানার মদই পান করেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি অ্যাডফার্মের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন। ২৮ জানুয়ারি তিনি মদ খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ৩১ জানুয়ারি রাতে মারা যান। একই সঙ্গে মদপান করে গুরুতর অসুস্থ মামুনের বন্ধু কাজী শেহজাদ ধানমন্ডির একাধিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।

এদিকে বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে পিতা-পুত্রসহ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩ তে দাঁড়িয়েছে।

গাজীপুরের একটি রিসোর্টে মদপানের ঘটনায় রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম শরিফ জামান শখিন (২৬)। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল চারজনে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments