রাজধানীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ(সহ অধিনায়ক) পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন, মামলা ও কারা দপ্তরের নির্বাহী সোহেল রানা, গাজীপুরের বিভাগীয় নায়ক রবি আহমেদ পাপ্পু, দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান খালেকুজ্জামান, মামলা ও কারা দপ্তরের সহযোগী মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন।
রাজধানীর ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক অভিযানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এটিইউ’র এসপি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ফার্মগেট তেজতুরী বাজার সংলগ্ন প্যাসিফিক হোমস টাওয়ারের নিচতলা থেকে জঙ্গি সংগঠনটির সহ-অধিনায়ক কামাল ও নির্বাহী সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের দেয়া তথ্যানুসারে, মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার শেরে বাংলা রোডে অভিযান পরিচালনা করে অন্য ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ভিসা কার্ড ও কারাবন্দিদের টাকা প্রদানের স্লিপ এবং ৩৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এটিইউ’র এসপি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কামাল হোসেন ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আল্লাহর দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। তিনি ২০০৪ সালে আল্লাহর দলের প্রধান মতিন মেহেদীর নিকট শপথ গ্রহণ করে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত খালেকুজ্জামান ২০০০ সালে মতিন মেহেদীর মাধ্যমে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলায়, ২০১৭ সাল থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সে ঢাকা জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে তিনি কেন্দ্রের দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি জানান, মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন আল্লাহর দল প্রধান মতিন মেহেদীর ভাগ্নে। ১৯৯৯ সাল থেকে সে মতিন মেহেদীর একান্ত সহযোগী হিসেবে আল্লাহর দলের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। সোহেল রানা ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তারা আল্লাহর দলের গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের আদালতে মামলা বিষয়াবলী দেখাশোনা, কারাবন্দি ও তাদের আত্বীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ পূর্বক সহযোগীতায় নিয়োজিত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত রবি আহাম্মেদ পাপ্পু ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে গাজীপুর জেলায় বিভাগীয় নায়েক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দেশের বর্তমান নির্বাচনী ও ভোটাধিকার ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে তারা শয়তানের দল বলে অভিহিত করে। তারা দেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদকে স্বীকার করে না। তারা নিজেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে না এবং অন্যকেও ভোটাধিকার প্রদানে নিরুৎসাহিত করে। তারা নারী নেতৃত্বে বিশ্বাস করে না এবং প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে। তাদের মতাদর্শের সদস্যের নিকট থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা উত্তোলন করে দেশ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
তারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের আদর্শের অনুকুলে সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।