fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধহেফাজতে ইসলামের দেশি-বিদেশী অর্থদাতাদের সন্ধান মিলেছে

হেফাজতে ইসলামের দেশি-বিদেশী অর্থদাতাদের সন্ধান মিলেছে

হেফাজতে ইসলামের সব মাদ্রাসায় স্থায়ী অর্থদাতা ৩১৩ জন :পুলিশ বলছে, দেশের সব মাদ্রাসায় প্রতি বছর অর্থদাতাদের একটি তালিকা রয়েছে। প্রতি বছর প্রতিটি মাদ্রাসায় পৃথক ৩১৩ জন অর্থ সহায়তা করেন। তবে এর বাইরে অনেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। তবে মাদ্রাসা ও মসজিদের নামে দেশি-বিদেশি অনেকের কাছ থেকে অর্থ এনে হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের মাধ্যমে মাদ্রাসা ও মসজিদের ছয় কোটি টাকা লেনদেন হয়। এখনও তার একটি অ্যাকাউন্টে ৪৭ লাখ টাকা জমা রয়েছে।  সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

প্রথম দফায় মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে অন্য একটি মামলায় আরও সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন মামুনুল।

হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। গত রোববার নাটকীয়ভাবে সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন বাবুনগরী। এ ব্যাপারে রিমান্ডে থাকা মামুনুলের মতামত জানতে চান গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে মামুনুলের ভাষ্য, ‘কমিটি বিলুপ্তিতে তিনি খুশি।’ তবে আহ্বায়ক কমিটি ও নতুন কমিটি যারা আসবেন তাদের নিয়ে হেফাজতের এই নেতার মনে অনেক দ্বিধা রয়েছে। বাবুনগরীপন্থিদের আদর্শের ভিত্তিতে তারা সংগঠন চালাতে পারবেন কিনা, এ ব্যাপারে সন্দিহান মামুনুল। মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানান।

যে কমিটিতে মামুনুল অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন সেই কমিটি বিলুপ্তের পর কেন খুশি তিনি- এমন প্রশ্নে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মামুনুল ভাবভঙ্গিতে এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন হয়তো হেফাজতের সঙ্গে কোনো ‘সমঝোতা’ হয়েছে। এর পরই কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেন বাবুনগরী। তার বিশ্বাস, যেহেতু এক ধরনের ‘সমঝোতায়’ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা এসেছে তাই এবারের মতো তিনি ‘রক্ষা’ পাচ্ছেন। তার প্রতি ‘নমনীয়’ আচরণ করা হতে পারে।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, বাবুনগরী ছাড়াও হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল ইসলামের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে মামুনুলের। কমিটির অন্য তিন সদস্য হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, সালাহ উদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের প্রতি তার তেমন ‘আস্থা’ নেই।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, হেফাজতের অর্থদাতাদের ব্যাপারে খোজ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময় মামুনুলের হাতে এসেছে ছয় কোটি টাকা। এসব টাকা মাদ্রাসার ছাত্রদের পেছনে খরচ হয়েছে নাকি সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, তা খাতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে মামুনুলের অর্থ-সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া হেফাজতের এই নেতার মোবাইল ফোনও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, মামুনুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফীকে সরিয়ে দিয়ে আমির হিসেবে বাবুনগরীকে বসানোর পরিকল্পনা হয়। তবে পরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শফীর অনুসারীদের মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গতকাল জানান, এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ২১ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। মামুনুলসহ বেশ কয়েকজন রিমান্ডে রয়েছেন। মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ২৬ মার্চ ও পরবর্তী কয়েকদিন সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হেফাজতের অর্থ জোগানদাতাদের অর্থের উৎস কী সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। মতিঝিল শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মের তাণ্ডব ও গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমের ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় বর্তমানে তিনি সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। গ্রেপ্তারের আগে ৩ এপ্রিল জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে জনতার হাতে আটক হন মামুনুল। সেখানে তিনি ঝর্ণাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। পরে আরও বিয়ের তথ্য তিনি নিজেই জানান।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী কয়েকটি সংগঠন। ২৬ মার্চ ও এর পরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায় হেফাজত। তাদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

এসব ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডিবির কাছে রয়েছে ১৭টি মামলা। ২৩টি মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments