বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) অধীনে ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রায় ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেয়া হয়। তবে অব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও বিভাগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এই প্রকল্পের প্রায় ৩ কোটি টাকা জলে গেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থ দিয়ে বিভাগে উন্নতমানের গবেষণাগার স্থাপন করা হয়। গবেষণাগারটি স্থাপনে ব্যয় হয় পৌনে তিন কোটি টাকা। এছাড়া ৪২ হাজার টাকা দরে ৪৮টি ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটার কিনে স্থাপন হয় অন্য একটি বায়োইনফরমেটিক্স গবেষণাগার। আর বাকি টাকা ব্যয় হয় বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে।
অবকাঠামো ছাড়া প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারের যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। নষ্ট হওয়া বড় যন্ত্রের একটি বিভাগের সেন্ট্রাল ল্যাবের হাই প্রেশার লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি (এইচপিএলসি), যার বাজার মূল্য বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মাইনাস ৮০-ডিগ্রি সেলসিয়াস রেফ্রিজারেটর, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বায়ো ইনফরমেটিক্স ল্যাবের ৪৮টি কম্পিউটারের অধিকাংশই অকেজো। বিকল হয়ে রয়েছে বড় একটি জেনারেটর। যা স্থাপনের পর কখনোই চালানো হয়নি। জেনারেটরটির বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।
এই জেনারেটর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পুরো ভবন কাভারেজ করা যাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের। আরও অনেক দামিদামি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান তারা।
বিভাগের হেকেপ প্রজেক্টের সাব প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এরপর ৮ বার অডিট হয়েছে প্রকল্পটি এবং দেশের ৪ শতাধিক প্রকল্পের মধ্যে ২য় স্থান অধিকার করে আমাদের প্রকল্প। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এত পরিশ্রম করে কাজ করলাম সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া কিছুই থাকলো না। যন্ত্রপাতিগুলোর ১২টা বেজে গেছে।
এই ক্ষতির কারণ হিসেবে অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, গবেষণাগারটি ব্যবহার হলে কখনোই নষ্ট হতো না। অন্য বিভাগের একজন গবেষক গবেষণার কাজে ল্যাবটি ব্যবহার করতেন। পরে তাকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। ব্যবহার করতে দেয়া হলে আজকে এই পরিণতি হতো না।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর রানিং অবস্থায় আমি তিন বছর ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করি। এই সময়ের মধ্যেই সব ওলটপালট হয়ে গেছে।
এদিকে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, বিভাগ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ল্যাব পরিচালনার জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে না পারা, নিয়মিত ল্যাব না খোলায় ময়লা জমে যাওয়া, বন্ধ রুমে অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি কারণেই এই অবস্থা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. গোলাম কবির বলেন, যে সময়ে এই ল্যাবটি চালু হয় তখন আমি বিভাগে ছিলাম না। যে কোনো যন্ত্র নষ্ট হতেই পারে। একেবারে চলে না এমন নয়। তবে যন্ত্রগুলো যাতে মেরামত করা যায় বিভাগ থেকে সে চেষ্টা করা হবে।