করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সরকারী নির্দেশে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ। সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সংস্থা প্রতিদিনই তাদের আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন গনমাধ্যমকে। দেশে বাড়ছে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট টাইপের সংক্রমিত রোগী।
এই সময় সরকারী নির্দেশ ঊপেক্ষা করে রাজশাহীত গণপরিবহন প্রতিষ্ঠান ‘দেশ ট্রাভেলস’ কাউন্টার এর একটা পাল্লা খোলা রেখে যাত্রী সংগ্রহ করছে। মাইক্রোবাসে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়। প্রতিদিন তারা চারটি মাইক্রোবাস দিয়ে পুলিশ প্রশাষনের সামনে দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে দুরপাল্লার যাত্রী পরিবহন।
রবিবার সকালের দিকে রাজশাহী শিরোইল ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় দেশ ট্রাভেলস পরিবহন সংস্থার কাউন্টার খোলা রয়েছে এবং যাত্রীদের সাথে মাইক্রোবাসে নিয়ে যাওয়ার চুক্তি চলছে। এসময় অদুরেই পুলিশের একটি পিকআপে কয়েক জন পুলিশ সদস্য কে বসে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় যাত্রী দেখলেই চার-পাচজন ব্যাক্তি কে বলতে দেখা যায়,কোথায় যাবেন ভাই? ঢাকা যাবেন ভাই? এসি মাইক্রো, আসেন ভাই। যাত্রীকে কর্নপাত না করতে দেখে এদের কাউকে আবার বলতে দেখা যায়,আমার টা নতুন গাড়ি ভাই।
দেশ ট্রাভেলস কাউন্টার থেকে মাইক্রোবাসের একটি সীটের চুক্তি শেষে বের হয়ে আসা একজন যাত্রীর সাথে কথা হয় সচেতন বার্তার। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকুরী করেন। তার নাম সাহিদা খাতুন (৩০)। তিনি বলেন, ‘চাকরির ছুটি শেষ, ঢাকা যেতে হবে, টার্মিনালে এসে দেশ ট্রাভেলস কাউন্টার খোলা দেখে গেছিলাম। মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাবেন, তবু বাঁচলাম।’ উনি জানালেন সিটপ্রতি দুই হাজার করে টাকা নিচ্ছে। রাত ১০ টার মাইক্রোবাসে তিনি রওনা হবেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ ট্রাভেলস রাজশাহী থেকে প্রতিদিন মাইক্রোবাসের চারটি ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করছে। সকাল দশটায় প্রথম ট্রিপ, এরপর দুপুর ১২ টায়, বিকেল তিনটায় ও রাত্রী ১০ টায়।
মাইক্রোবাসের যাত্রা শুরু বাস টার্মিনাল এর প্রধান কাউন্টার থেকে নয়। তাদের রাজশাহী সিটি বাইপাসের শাখা কাউন্টার থেকে মাইক্রোবাসে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। জানা যায়, এই শাখা কাউন্টার থেকেও যাত্রী কন্ট্রাক হয়। প্রতি যাত্রীর নিকটে থেকে ২ থেকে ৩ হাজার করে টাকা নিচ্ছে বলেও জানা যায়।
রবিবার রাত ১০ টার আগেই সচেতন বার্তার প্রতিনিধি উপস্থিত দেশ ট্রাভেলস সিটি বাইপাস শাখা কাউন্টারের সামনে। দেখা যায় কয়েকজন যাত্রী কাউন্টারের ভেতরে বসে আছেন। রাত সাড়ে দশ টার দিকে মাইক্রো এসে থামলো কাউন্টারের সামনে যার নং-ঢাকা মেট্রো-চ ১৯-২১৩০। রাস্তার অপর পাশে চায়ের দোকানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য চা পান করছিলেন।
সোমবার রাত ১১টা ৪৪মিনিটে যাত্রী বেশে দেশ ট্রাভেলস প্রধান কাউন্টারে সচেতন বার্তার একজন মহিলা প্রতিনিধি ফোন করে তাদের মাইক্রোবাস সার্ভিস সম্পর্কে জানতে চাইলে কাউন্টার মাস্টার জাহিদ বলেন সকাল দশটায় প্রথম ট্রিপ, এরপর দুপুর ১২ টায়, বিকেল তিনটায় ও রাত্রী ১০ টায়। দিনে ৪ টা মাইক্রোবাস চলছে। তিনি জানতে চান কয়টার গাড়িতে যাবেন? সিট প্রতি ভাড়া ২২০০ টাকা বলে জানান। ভাড়ার টাকা পাঠাতে একটি বিকাশ নং দেন(০১৭৬৭৯০০১১৯)।
মহিলা যাত্রীর কথা শুনলেই তারা বলছে, কালকের মাইক্রোতে একটা ফ্যামিলি যাবে। বাস্তবে কোনই ফ্যামিলি নয় সব পুরুষ যাত্রীদের সাথে সামনের সিটে বসে একমাত্র মহিলাকে আসতে বাধ্য হতে হচ্ছে।সামাজিক দূরত্ব বজায় তো দুরের কথা। দেখা গেছে ১০ সিটের মাইক্রোতে ১১ জন যাত্রীও বহন করছে তারা।
এ বিষয়ে দেশ ট্রাভেলস রাজশাহীর প্রধান কাউন্টার এর নম্বরে(০১৭৬২৬৮৪৪০০) মোবাইলে জানতে চাইলে দেশ ট্রাভেলস এর কাউন্টার মাস্টার জাহিদ বলেন, আমাদের কোন মাইক্রো এধরনের সার্ভিস দিচ্ছে না। এসময় তাকে বলা হয় যে মিনিট দশেক আগেও এক জন মহিলা যাত্রী কে আপনাদের মাইক্রো সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে ভাড়ার ২২শ টাকা প্রদানের জন্য বিকাশ একাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। সে সময় কিছুটা থমকে গিয়ে কাউন্টার মাস্টার জাহিদ জানান, প্রতিদিন বাস টার্মিনাল থেকে অনেক মাইক্রোবাসই যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে।
রবিবার রাতের ট্রিপের মাইক্রোবাসের ড্রাইভার রাজুকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে সোমবার দিবাগত রাত (মঙ্গলবার) ১ টা ৭ মিনিটের সময় সে সচেতন বার্তাকে বলেন, ‘আমি অলরেডী দেশ ট্রাভেলসের ভাড়া নিয়ে সিরাজগঞ্জে’।
ঢাকা বাস টার্মিনালে দেশ ট্রাভেলসের মাইক্রোবাস সার্ভিসের বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) নিবারণ চন্দ্র সচেতন বার্তাকে বলেন, ‘না না এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই। ফাঁড়ি আছে, আমাদের একটা পিকআপ সবসময় টার্মিনালে অবস্থান করে’। তাহলে হয়ত মাইক্রো অন্য কোথাও থেকে ছাড়ে। এসময় উনাকে বলা হয় আপনি ঠিকই বলেছেন, মাইক্রোগুলো সিটি বাইপাস থেকে ছাড়ে, বোঝা যাচ্ছে যে আপনি দেশ ট্রাভেলসের মাইক্রোবাসের সার্ভিস সম্পর্কে অবগত আছেন। বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে চাইলে সচেতন বার্তার প্রতিনিধি দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন বাস টার্মিনাল থেকে অনেক মাইক্রোই প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছে। তাহলে আপনার পিকআপ এগুলো ধরে না কেনো, তিনি বলেন, ‘না না এমন তো হওয়ার কথা না আমি এখনই দেখছি বিষয়টি’।
ঘটনার বিষয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান সচেতন বার্তাকে বলেন, না সিটি বাইপাস মোড় রাজপাড়া থানার আওতাভুক্ত নয় শাহ্মখদুম থানার আওতায়। এসময় সচেতন বার্তার প্রতিনিধি ফোন রেখে দিতে চাইলে তিনি জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন তেমন কোন সমস্যা কিনা। সিটি বাইপাস থেকে দেশ ট্রাভেলসের মাইক্রোবাস যাত্রী বহনের বিষয়ে তাকে বলা হলে তিনি বলেন, না না এমন তো হবার কথা নয়। এটা তো খুব অন্যায়, দেখতে হবে বিষয়টা’।
উল্লেখ্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে বহরমপুর সিটি বাইপাস মোড় রাজপাড়া থানার আওতাভুক্ত বলা হলেও ওসি হাফিজুর রহমান কি কারণে রাজপাড়া থানার আওতাভুক্ত নয় বলেছেন, তা আর এম পি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিৎ। একই সাথে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে দুরপাল্লার যাত্রী পরিবহন কারীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।