প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকরা ।
বুধবার (১৮ মে) বিভিন্ন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এসব দাবি জানায় সাংবাদিকরা।
এ সময় তারা, ‘দুনিয়ায় সাংবাদিক, এক হও লড়াই করো’ এবং রোজিনা আপা কারাগারে কেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জবাব চাই,’ স্লোগান দেন।
সাংবাদিক শামীমা দোলা বলেন, ‘রোজিনা ইসলামকে সবাই চেনেন, তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। তিনি দীর্ঘদিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে আসছিলেন। সেই আক্রোশ গতকালকে মিটিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দুর্নীতির রিপোর্ট বন্ধ করার জন্য গতকালকের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে সেটা কখনোই বন্ধ হবে না। দরকার হলে আমরা সবাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হব। আমরা অনুসন্ধান করে বের করবো সকল দুর্নীতি। সরকারের সব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখোশ উন্মোচন করব।’
সরকারি আমলাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা চোর-বাটপার সেটা তুলে ধরার সাহস আমাদের আরও বাড়বে। কালকের ঘটনায় মনে করবেন না, যে আমার আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। চোর-ডাকাতদের মুখোশ সাংবাদিকরা একটা সময় উন্মোচন করবেই।’
সাংবাদিক পুলক ঘটক বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিষয়ে সব সম্পাদকরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। তাই আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের পক্ষে এবং সহকর্মীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘রোজিনা কে হেনস্তা করে মেডিকেলে না নিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সারা রাত হয়রানির পর আজ কোর্টে নিয়ে গেছে।’
পুলক আরও বলেন, ‘একজন সাংবাদিকের কাছে পুলিশ বা প্রশাসন কী তথ্য চায় যে তারা রিমান্ডের আবেদন করল? রিমান্ডের আবেদন করে তার জামিন আবেদনকে ব্যহত করতে চেয়েছে। জামিনের আবেদন ক্যান্সেল করেনি। যাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ না পায় সেজন্য জামিন আবেদন পেন্ডিং করেছে নিম্ন আদালত। কার ইশারায় এসব করা হচ্ছে আমরা জানতে চাচ্ছি। এই সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে।’
সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে সাংবাদিকরা বলেন, ‘একজন নারী কর্মী কীভাবে অন্য একজন নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা করতে পারে, এটার জবাব সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে। না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। এই ঘটনার জন্য সরকার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সাধারণ জনগণ এবং সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’
সাংবাদিকরা রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি আমার বোনকে সচিবালয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হেনস্তা করেছে তার বিচারের দাবিতে। আমরা তার মুক্তি দাবি করছি এবং তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। রোজিনা ইসলামকে মুক্তি না দিলে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সহ-সভাপতি ওসমান গনি, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, সিনিয়র সদস্য নজরুল ইসলাম মিঠু, কার্যকর নির্বাহী সদস্য রহমান আজিজ, রোমানা জামান, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টারস এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফ রানা, যুগান্তরের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মোজ্জাম্মেল হক চঞ্চল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) সহসভাপতি এমএ কুদ্দুস, অন্য অংশের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর সংগ্রাম সম্পাদক জেবুন্নেছা খান প্রমুখ।