বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পোস্ট কোভিড জটিলতায় খালেদা জিয়া পুরনো রোগ আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে।
বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। তার শারীরিক অবস্থার খুব ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার তার ফুসফুসের পানি বের করার জন্য বুকের দুই পাশের দুই পাইপের মধ্যে বাম পাশেরটা খুলে ফেলা হয়েছে। এখন তার ফুসফুসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী ফুসফুসে কতুটুক পানি আসে সেটার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। তবে আশার কথা হচ্ছে- খালেদা জিয়ার ফুসফুসের জটিলতা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। শনিবার তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বৈঠক করে অপর পাইপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আরেকজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়া এখন নিয়মিত খাবার খেতে পারছেন। তার মুখের রুচি অনেকটা ফিরে এসেছে। তাকে প্রতিনিয়ত জাউ, স্যুপ ও পেপের জুস দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিমাণে অনেক কম খাচ্ছেন। তার ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। যদিও তাকে এখনো নিয়মিত ইনস্যুলিন নিতে হচ্ছে।
ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য উপসর্গ এখন সবটাই ভালো অবস্থানে আছে। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন এখন বেশ ভালো, তার শরীরের এখন জ্বর নেই এবং তার শ্বাসকষ্টও নেই। হার্টের অবস্থাও এখন অনেকটা ভালো। কিডনি জটিলতাও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নিয়মিত চেকআপের জন্য তার ইসিজি ও ইকোসহ অন্যান্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেই আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তার শারীরিক দুর্বলতাসহ অন্যান্য কারণে তাকে এখনই কেবিনে নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। ফলে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।
খালেদা জিয়ার অপর একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়া দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যে ১৯ দিন সিসিইউতে আছেন। এতো সময় ধরে একজন রোগী কোভিড পরবর্তী জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। খালেদা জিয়ার যে বয়স এবং আগে থেকে তার যেসব সমস্যা রয়েছে তার জন্য চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। তার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। নানান উপসর্গ দেখা দেয়ায় পরিবারের সদস্যরাও চিন্তামুক্ত নন। তবে এখন তার যে অবস্থা তাতে চিকিৎসকরা অনেকটা আশাবাদি। তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।
গত ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের অধীনে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাদের পরামর্শে ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৩ মে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন।
এর আগে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার মুখে একটু হাসি দেখেছি। যেটা এই কদিন একেবারেই ছিল না। তবে এখনো কোভিড পরবর্তী জটিলতায় খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও কিডনি কিছুটা আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন।