পাবনায় আলোচিত শাহজাহান অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলার রহস্য উদঘাটন এবং মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পাবনা পিবিআই।
সোমবার রাতে পলাতক থাকা অবস্থায় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার উত্তর গাজীর চট এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন -পাবনা শহরের শালগাড়ীয়া প্লাস্টিক মোড় এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছা. যুথী আক্তার ওরফে আদুরী (২৮)। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল এই মামলায় মো. ইব্রাহীম প্রামানিক নামের একজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআই জানায়, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা সাতটার দিকে শালগাড়িয়া শাপলা প্লাটিক এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শাহজাহান আলী (৪০) নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় শাহজাহানের পরিবারের সদস্যরা গত ১ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। পরে গত ৫ এপ্রিল দুপুরে আটঘরিয়া থানার গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার একটি বাড়ির টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতর হতে বস্তাবন্দি একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন মরদেহটি শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. আব্দুল গফুর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে মামলাটি পিবিআই হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে পিবিআই, পাবনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পিবিআই পাবনা প্রধান পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সবুজ আলী জানান, এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গ্রেপ্তার দম্পতি যে বাড়িতে থাকতেন নিহত শাহজাহান আলী সেই বাড়ির ভাড়া ওঠানোর দায়িত্বে ছিলেন। শাহাজানের বাসাও ছিল পাশাপাশি। নিহত ওই ব্যক্তি অবিবাহিত ছিলেন। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মোছা. যুথী আক্তার ওরফে আদুরীর সঙ্গে শাহজাহানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি শাহজাহান তার প্রেমিকা যুথীর ওপর কর্তৃত্ব করতে চাওয়ায় তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। যুথী এক পর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে সব ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলে। তখন যুথীর স্বামী ও তার লোকজন শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী যুথীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমের ওষুধ কিনে যুথীকে দেন। যুথী ভিকটিম শাহজাহানকে সুকৌশলে ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে অন্য আসামিদের যোগসাজশে আটঘরিয়া থানার গঙ্গারামপুর গ্রামে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শাহজাহানকে খাওয়ান। ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়লে যুথী তার স্বামী জাহাঙ্গীর এবং অন্যান্য আসামিদের নিয়ে শাহজাহানকে হাত-পা বেঁধে গলার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে তারা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়া থানা গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি বসতবাড়ির টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরবর্তীতে যুথী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকা পালিয়ে যান।
পিবিআই পাবনা প্রধান পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামি যুথী আক্তার ওরফে আদুরী ও তার স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিমকে সু-কৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের নামও প্রকাশ করেছেন।