fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িঘটনা-দুর্ঘটনারাজশাহীতে এক ফ্রিল্যান্সারের আত্মহত্যা

রাজশাহীতে এক ফ্রিল্যান্সারের আত্মহত্যা

ফেসবুকে দেশবাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেছেন, ‘তিন মাস থেকে আমার ঘরে খাবারের কষ্ট। আমার বউ অনেক কষ্টে খাবার জোগাড় করতেছে। কথাগুলো লিখতে লিখতে অনেক কাঁদলাম।’

কথিত আউটসোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার প্রায় চার হাজার ফ্রিল্যান্সার এক মাসের মধ্যে টাকা না পেলে একযোগে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন । এই ঘোষণার আড়াই মাসের মাথায় সত্যিই আত্মহত্যা করলেন রাজশাহীর এক ভুক্তভোগী।

মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে দেশবাসীর উদ্দেশে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এতে বলেছেন, ‘তিন মাস থেকে আমার ঘরে খাবারের কষ্ট। আমার বউ অনেক কষ্টে খাবার জোগাড় করতেছে। কথাগুলো লিখতে লিখতে অনেক কাঁদলাম।’

মঙ্গলবার দুপুরে বাসার একটি কক্ষ থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে। এই ফ্রিল্যান্সারের নাম আনারুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৫)। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের হোসেনিগঞ্জ এলাকায়। তিনি পাশের শেখপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষেই তাঁর কার্যালয় ছিল। সেই কক্ষে কম্পিউটারের চারটি মনিটর রয়েছে। সেখানে বসেই তিনি ফ্রিল্যান্সিং করতেন।

ফেসবুকে লেখা স্ট্যাটাসে আনারুল ইসলাম ‘রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তাঁর ‘ব্যাচ নম্বর ১৬৬’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আবদুস সালাম পলাশ। তাঁর বিরুদ্ধে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

আনারুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ফেসবুকে ‘আনমাস্কিং পলাশ অ্যান্ড রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট’ নামের একটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। এতে গত ১১ মার্চ তারিখে ‘পলাশের শাস্তি চাই বিনিয়োগকারী ফ্রিল্যান্সারদের টাকা ফেরত চাই’ শিরোনামে একটি ব্যানার পোস্ট করা দেখা যায়। সেখানে চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁরা বলেছেন, এক মাসের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে তাঁদের আত্মহত্যা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ থাকবে না।

এই ঘোষণার আড়াই মাসের মাথায় ফ্রিল্যান্সার আনারুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করল পুলিশ। আনারুল ইসলাম তাঁর স্ট্যাটাসে বলেছেন, কিছুদিন আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

আনারুল ইসলাম দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তাঁর স্ত্রী রুবি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, রাতেই তাঁর স্বামী মোবাইল ফোনে থাকা পারিবারিক ছবিগুলো ল্যাপটপে স্থানান্তর করে দিয়েছেন। তাঁর কক্ষেই কাজ করছিলেন। ফজরের নামাজের সময় ডেকে সাড়া পাননি। বেলা ১১টার সময় তাঁর কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

 

আনারুলের মেয়ে রুকু (১০) বলে, ‘ঘুমানোর আগে বাবা আমার কানে ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন। আর বলেছেন, বাবা মারা গেলে আমি যেন মাকে জ্বালাতন না করি।’ সর্বশেষ রাত ১২টার দিকে বাবাকে মোবাইলে লিখতে দেখে সে ঘুমিয়েছিল।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments