‘প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে কেন বিতর্কিত করেন? রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অফিসকে কেন প্রশ্নের সম্মুখীন করেন? আপনার কাছে এ ধরনের অপরাধ ছোট মনে হতে পারে; কিন্তু এটাকে নমনীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখার সুযোগ নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে আইনজীবীর উদ্দ্যেশে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির মামলায় হাইকোর্টে জামিন চান ঐ কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মচারী ফাতেমা খাতুন। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদী।
শুনানিতে তিনি বলেন, ‘মাই লর্ড এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন আসামি। তিনি অসুস্থ। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, জেল খানায় গেলে ই কি সবাই অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদের কিছুই করার নাই।’
আইনজীবী বলেন, ‘তিনি এজাহারের তিন নম্বর আসামি। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রয়েছে।গত বছরের ১০ মে থেকে কারাগারে। জামিন মঞ্জুরের আবেদন করছি।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিতর্কিত কেন করেন? জামিন দেওয়া হবে না। শুধু রুল নিতে পারেন।’ আইনজীবী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ।’ আদালত বলেন, ‘কিছু করার নাই। পরে আইনজীবী রুল নিতে চাইলে হাইকোর্ট আসামির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের করে জালিয়াতির মাধ্যমে তার (প্রধানমন্ত্রীর) সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। ঐ মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলাম মমিন, কর্মচারী ফাতেমা খাতুনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
অভিযোগপত্রে অপর আসামিরা হলেন নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি−গোপনীয় এ তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন।
এরপরেই তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪ নম্বর গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এ কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এরপরেই সেই নথিতে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেয়। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেয়। পরে আসামিরা গত ৩ মার্চ তারিখে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এসব ঘটনা নিয়ে ভাটারা এলাকার সানফ্লাওয়ার রেস্টুরেন্টে আসামি নাজিমের সঙ্গে তরিকুল ও ফরহাদ শলাপরামর্শ করে। তবে তাদের জালিয়াতিটি ধরা পড়ে যায়।
জালিয়াতির এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ।