আজ শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। যারা বোরকা পরে নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছে, তারা কেউ ছাড় পাবে না। তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মেয়েটিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনক, মেয়েটি আমাদের ছেড়ে চলে গেল। তাকে হত্যা করা হয়েছে। বোরকা পরে হাত-মুখ ঢেকে তারপর তাঁকে আগুন দেওয়া হয়েছে। এরা কেউই ছাড় পাবে না। আমরা ছাড়ব না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাদের পেতে হবে। যেন আর কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। তিনি বলেন, আমরা মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে চেয়েছিলাম। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার মতো ছিল না। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না। বিনা কারণে মেয়েটিকে হত্যা করা হলো। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড়ব না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘটনার শুরুটা কারা করেছিল? ২০১৩ সালে নির্বাচন পণ্ড করার নামে যে জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। কিন্তু তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আবার ২০১৫ সালে সরকারকে উৎখাত করার নামে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এই দেশে এমন বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন দেশের মানুষের ওপর হামলা শুরু করে, তখন তারা বস্তিতে আগুন দিত। আগুন দেওয়ার পর যখনই তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসত, তখনই তারা তাদের গুলি করে হত্যা করত। এভাবে তারা বহু মানুষ হত্যা করেছে। বিএনপির আমলেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০-দলীয় জোট করেছে। সেই ২০ দলে আছে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত। এই বিএনপি-জামায়াত জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। এ ছাড়া বাসে, ট্রেনে, ট্রলারে আগুন দিয়েও মানুষ পুড়িয়েছে। এই যে যেখানে সেখানে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এই পথটা তো বিএনপিই দেখিয়ে গেছে। আমি মনে করি এগুলো প্রতিহত করতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি হওয়া দরকার।
ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যে আগুন লাগছে, এটার প্রতিকার করতে গেলে যাদের ভবন আছে, তাদের একটা দায়িত্ব আছে। যারা ভবন ব্যবহার করে, তাদের জানা থাকা দরকার, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে ওই ভবন থেকে বের হতে হবে। অগ্নিনির্বাপকযন্ত্রও তাদের থাকা উচিত। আমাদের দেশে একটি প্রচলন আছে, কোনো কিছু হলেই তা সরকার সমাধান করে দেবে। সরকার তো সরকারের কাজ করবেই, কিন্তু সবার স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, যাঁরা প্ল্যান করেন, যাঁরা আর্কিটেক্ট, যাঁরা অনুমোদন দেন, তাঁদেরও দায়িত্ব আছে। তাঁরা যেন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। আমাদের সবকিছু প্ল্যান করে ডিজাইন করা উচিত। এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়ব না, এ মানসিকতা থাকা উচিত না। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে ফায়ার এক্সিট নেই, এটা কেমন কথা? যাঁরা ভবন ব্যবহার করেন, তারা তো শিক্ষিত মানুষ। তাঁদের মধ্যে তো সচেতনতাবোধ থাকা উচিত।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বনানীর যে ভবনে আগুন লাগল, সেই ভবনটিতে দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসের বাহিনী যে কাজ করবে, তারা যে একটা জায়গায় দাঁড়াবে, সেই ব্যালকনি পর্যন্ত নেই। এ রকম অপরিকল্পিত ভবনে আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে আমাদের একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহেল নিহত হলো। আমি চেষ্টা করেছিলাম, তাঁকে চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরও তাঁকে বাঁচানো গেল না।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক লেখালেখির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর কোনো ধরনের নাটক নির্মাণ, লেখালেখি বা ক্রীড়ানুষ্ঠান-টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউল রহমান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল খালেদ, হামিদা বানু, মুকুল বোস, মোহাম্মদ জমির, মসিউর রহমান, মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ অন্যরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।