fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধপাচারকৃত নারীদের 'আধার কার্ড' ব্যবহার করে রাজ্য স্থানান্তর

পাচারকৃত নারীদের ‘আধার কার্ড’ ব্যবহার করে রাজ্য স্থানান্তর

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যেমন তেমনি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি ‘আধার কার্ড’। এই কার্ড ব্যবহার করে এ দেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে স্থানান্তর করছে সংঘবদ্ধ চক্র।

এমন প্রেক্ষাপটে কারা কীভাবে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারীদের এই কার্ড সরবরাহ করছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংশ্নিষ্ট দুটি দেশ।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ জানান, নারী পাচার করে ভারতে নেওয়ার পর যে আধার কার্ড দেওয়া হয়, তা আসল নাকি নকল, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাচাই করে দেখবে। মূলত এ তদন্ত করবে ভারতীয় পুলিশ। কারণ, আধার কার্ড তাদের ওখান থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। আধার কার্ড আসল হলে বুঝতে হবে এর পেছনে আরও বড় কোনো চক্র আছে। আবার এমনও হতে পারে, জালিয়াতি করে নকল কার্ড তৈরি করে পাচার হওয়া তরুণীদের দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রমের পরপরই পাচার হওয়া প্রত্যেক নারীকে ধরিয়ে দেওয়া হয় এই কার্ড। যেখানে থাকে নাম, মা-বাবার নাম, জন্মতারিখ, ছবি, ১২ ডিজিটের একটি পরিচিতি নম্বরসহ বায়োমেট্রিক তথ্য। এই কার্ড বদলে দেয় তাদের নাম-পরিচয় ও ঠিকানা। রাতারাতি এক দেশের নাগরিক থেকে আরেক দেশের নাগরিক বনে যান তারা। যত দিন তাদের অন্ধকার জগতে থাকতে বাধ্য করা হয়, ততদিন চক্রের সবাই ওই নামে চেনে তাদের; ওই পরিচয় বহন করতে হয় তাদের।

সম্প্রতি ভারতে একজন বাংলাদেশি নারীকে নিপীড়নের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সূত্র ধরে নারী পাচারের একটি বড় চক্রের খোঁজ মিলেছে। পাশাপাশি জানা গেছে আধার কার্ডের এই অপব্যবহারের কথা। পাচার হওয়া একাধিক নারী জানিয়েছেন, পাচারের পর যত দিন ভারতে ছিলেন, তত দিন এই কার্ডই ছিল তাদের পরিচয়।

মগবাজারের যে নারীকে নির্যাতনের ভিডিও প্রথম ভাইরাল হয় তাকে দেওয়া আধার কার্ডে দেখা যায়, প্রকৃত নাম পাল্টিয়ে কার্ডে তার নাম রাখা হয়েছে জেসমিন মণ্ডল। বাবার নাম রাখা হয়েছে শাহজাহান মণ্ডল। জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের ১০ জানুয়ারি। তার পরিচিতি নম্বর-৫৭৪৫৪১২৩৮৪৭১। কার্ডে লেখা আছে, ‘সাধারণ মানুষের অধিকার’।

ভারতের বেঙ্গালুর থেকে ফিরে আসা এক বাংলাদেশি তরুণী জানান, পাচারকারীদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্ত পেরুনোর পরপরই তাকে একটি আধার কার্ড দেওয়া হয়। সেখানে তার নাম লেখা ছিল, কাজল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সে বেঙ্গালুর যাওয়ার সময়ও তার বিমান টিকিট কাটা হয়েছিল ‘কাজল’ নামে।

বেঙ্গালুর থেকে পালিয়ে গত মে মাসে দেশে ফিরে আসা আরও এক বাংলাদেশি তরুণী জানান, গত জানুয়ারিতে তাকে ভারতে পাচার করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন রাজ্যের নানা হোটেলে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাকে। তরুণী জানান, দেড় বছর আগে বিয়ে হয় তার। স্বামীর সঙ্গে শনির আখড়ায় বসবাস করতেন। স্বামীর কথায় জানুয়ারি মাসে ভারতে চাকরি করতে যান তিনি- তবে পরে বুঝতে পারেন স্বামীই তাকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরপর নদী নামে এক মেয়ের হেফাজতে দেওয়া হয় তাকে। নদীর সঙ্গে সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হন তিনি। সেখানে তাদের কয়েকদিন কলকাতায় রাখা হয়। এ সময় তাকে আধার কার্ড দেওয়া হয়। ওই কার্ড ব্যবহার করে টিকিট কেটে বিমানপথে চেন্নাই পাঠানো হয় তাকে। এখানে একটি বাসায় রেখে তার ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়। এ সময় তিনি জানতে পারেন, তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ফিরে আসা সম্ভব নয়। একদিন তিনি ওই বাসা থেকে জানালা দিয়ে পালাতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় জড়িত স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন তিনি।

তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক জানান, নারী পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশেই মামলা হয়েছে। দুই দেশই তদন্ত শুরু করেছে। বেশ কিছু তথ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি জানতে চেয়েছে। পুরো চক্রে যারা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সূত্র থেকে বেরিয়ে আসে টিকটক মডেল করার টোপ দিয়ে অনেক নারীকে বিভিন্ন সময় ভারতে নিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনায় হৃদয় বাবুসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুর পুলিশ। তাদের মধ্যে দু’জন পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই তরুণীকেও কেরালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

নারী পাচারের ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি ও মানব পাচার আইনে মামলা করেছেন। এতে হৃদয় বাবুসহ অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার বেঙ্গালুর ফেরত এক তরুণী। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে।

নারী পাচার মামলায় গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে বস রাফি পাঁচ দিন হাতিরঝিল থানার পুলিশ হেফাজতে থাকার পর গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই নামেই তিনি চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন তরুণীকে প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করতেন।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments