বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে চাই, সেনা প্রধান হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারি, আমি সম্মানের সাথে, আমি সম্পূর্ণ তৃপ্তির সাথে, এই সেনাবাহিনী থেকে প্রস্থান করছি। আমার উপর যে অর্পিত দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব আমি সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছি বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘কে কী ধরনের কথা বলল, দেশের এই বিশাল সংগঠনের এত শীর্ষ পর্যায়ে থেকে দুয়েকজন লোকের কথায় যদি বিভ্রান্ত হতে হয়, তা হলে তো সেনাবাহিনী কমান্ড করার… তা হলে আমি তিন বছর সেনাবাহিনী কমান্ড করলাম কীভাবে? আমিতো অপপ্রচারে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন মনে করিনি।’
চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদায়ী কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মেৎসর্গকারী সাতজন বীরশ্রেষ্ঠসহ সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি আধুনিক এবং চৌকষ বাহিনী হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
সেনাপ্রধান কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বলেন ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ এর আলোকে একটি আধুনিক এবং যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং রেজিমেন্ট অব আর্টিলারিতে সংযোজন করেছেন অত্যাধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি।
তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্য ইতিমধ্যেই কেনা হয়েছে অত্যাধুনিক ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, স্বয়ংক্রিয় এবং আধা স্বয়ংক্রিয় গ্রেনেড লঞ্চার এবং রকেট লঞ্চার/রকেট প্রপেলড গ্রেনেড লঞ্চার/রিকয়েললেস গ্রেনেড উইপন।
এ ছাড়া অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, এম-৪ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, মেশিন গান, গ্রাউন্ড সার্ভেলেন্স রাডারসহ আধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেটের অংশ হিসেবে হেড-টু-হেড কমিউনিকেশন সেট, নাইট ভিশন মনোকুলার, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় গেজেট কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যেই প্রতিটি ফরমেশনে ১টি করে পদাতিক ব্যাটালিয়নকে আধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেট দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৩টি নবগঠিত পদাতিক ডিভিশনের অধীনে ৩টি নতুন পদাতিক রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেইসাথে আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদাতিক ব্যাটালিয়নগুলোর প্রস্তাবিত সাংগঠনিক কাঠামো সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যেই এই রেজিমেন্টে যুক্ত হয়েছে নবগঠিত ৩টি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং ১টি এয়ার ডিফেন্স ব্রিগেডসহ ১৪টি আর্টিলারি ইউনিট। নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে সংযোজন করা হয়েছে দূরপাল্লার অত্যাধুনিক টাইগার এমএলআরএল (মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম) ও হাউইটজার।
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর আটিলারি অবস্থান শনাক্ত করার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য থেকে আনা হয়েছে সাউন্ড রেঞ্জিং ইকুইপমেন্ট। শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে কেনা হয়েছে স্টেট অব দি আর্ট প্রযুক্তিসম্পন্ন ওয়েবলিকন এয়ার ডিফেন্স ( এডি ) গান সিস্টেম। এ ছাড়া অতিশীঘ্রই সংযোজিত হবে রাডার কন্ট্রোল এডি গান সিস্টেম, দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল সিস্টেম এবং সুইডেনের তৈরি সার্ভে থিওডোলাইট।
আধুনিকায়নের পাশাপাশি যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে নির্মাণ ও সংস্কার করা হচ্ছে ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ এবং কেনা হচ্ছে অত্যাধুনিক সিমুলেটর। এ ছাড়া উপহার হিসেবে স্কুলে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ সুবিধাসম্পন্ন মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ চলতি বছরেই সম্পন্ন হবে।
সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তাদের নিজ নিজ উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
পরিশেষে, দেশপ্রেম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে তিনি রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।