করোনা ভাইরাসে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মৃত্যু এখন প্রতিদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সেখানে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাকে প্রথম পর্যায়ে গুরুত্ব না দিয়ে রোগীর অবস্থা যখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তখন চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। এ ছাড়া শেষ সময়ে যেসব রোগীর নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) সেবা দরকার হয়, তারাও সময়মতো আইসিইউ বেড পান না।
মে মাসের শুরু থেকে এমন কোনো দিন নেই যে করোনায় মৃত্যু হয়নি। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে মৃত্যু।
অবস্থা এমন যে, রামেকের করোনা ইউনিটের এখন একটি আইসিইউ বেড পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় প্রায় ৭০ জন রোগীর স্বজনদের। এ কারণে আইসিইউ বেডের অপেক্ষা করতে করতেই মারা যাচ্ছেন অনেকেই।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ৩০টি। তার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ আছেন এমন রোগীদের জন্য ২০টি বেড রয়েছে।
করোনা ইউনিটে ঈদের পরই মারা গেছেন আড়াই শতাধিক নারী-পুরুষ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
জুন মাসের প্রথম ১৬ দিনে মারা গেছেন ১৬১ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিদের মৃত্যু হয় উপসর্গ নিয়ে।
রাজশাহীতে হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এগুলোর কোনো হিসাব নেই।
রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আছে। এটি মারাত্মক। এটির আক্রমণে মৃত্যু বেড়ে যায়।
‘এ ছাড়া আমাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে খারাপ অবস্থায়ও বাড়িতে থাকছেন। মনে করছেন, ভালো হয়ে যাবেন। যখন তারা খুব খারাপ হয়ে যান তখন হাসপাতালে আসছেন। তখন আর তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না।’
দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে বা হাসপাতলে ভর্তি না হলে মৃত্যুহার কমানো যাবে না বলে মনে করছেন তিনি।
ডা. নওশাদ বলেন, ‘কেউ পজিটিভ হলে তার রক্ত, ফুসফুসসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করা দরকার। দ্রুত চিকিৎসা নিলে এটি ভালো হয়। যত বেশি দেরি করবে তত বেশি মৃত্যুহার বাড়বে।’
আইসিইউতে জায়গা না পাওয়া মৃত্যু বাড়ার কারণ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংকট আছে। চাইলেই সময়মতো সবাইকে দেয়া যাচ্ছে না। ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ড. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে যারা আসছেন, বেশি খারাপ অবস্থায় আসছেন, যে কারণে অক্সিজেন দিয়েও তাদের সারিয়ে তোলা যাচ্ছে না।’
রামেকের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ অবস্থায় রোগী খারাপ হওয়ার আগেই যদি চিকিৎসকের কাছে যান, তবে হয়তো তার আইসিইউ প্রয়োজনই হবে না। এ জন্য নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। ইগনোর করলে হবে না।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘মৃত্যু অনুপাতিক হারে বাড়ে। আগে আমাদের এখানে ৬০ থেকে ৬৫ জন রোগী ভর্তি থাকত। তখন ২-৩ জন মারা যেত। এখন আছে তিন শর বেশি। মৃত্যুও আনুপাতিক হারে বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়াদের মধ্যে বড় একটি অংশ বয়স্ক, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তাদের আরও অনেক রোগ ছিল। হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের সমস্যা, কিডনি জটিলতা ইত্যাদি। আর অন্য রোগে আক্রান্তরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
‘এ ছাড়া অনেকেই দেরিতে রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। তাদের অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ অক্সিজেন লেভেল কম থাকলেও বাসাতেই থাকছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসার ফলে এদের আর বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’