fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িরাজধানীমালিক সেজে অন্যের বাড়ি বিক্রি করা তাদের পেশা

মালিক সেজে অন্যের বাড়ি বিক্রি করা তাদের পেশা

নিজের বাড়ি নেই, থাকে ভাড়া বাসায়। তবে অনলাইনে মালিক সেজে তারা বিক্রি করে অর্ধশতাধিক কোটি টাকা দামের বাড়ি। নিদেনপক্ষে কোটি টাকার ফ্ল্যাট। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দামও নামিয়ে আনে অবিশ্বাস্য পর্যায়ে। গুলশানের ৬০ কোটি টাকার বাড়ির দাম হাঁকে মাত্র সাড়ে সাত কোটি। ফলে আগ্রহী ক্রেতার অভাব হয় না। যখন তারা যোগাযোগ করেন, তখন বায়না বা অগ্রিমের নামে তারা হাতিয়ে নেয় কয়েক হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা। এ পর্যন্তই তাদের কারবার, এরপর ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে যেসব বাড়ি তারা অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়, সেগুলোর মালিকরা কিছুই জানেন না। ক্রেতারা সরেজমিন বাড়ি দেখতে গেলেই বাধে বিপত্তি। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার সূত্র ধরে ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেটির তদন্তে বেরিয়ে আসে খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তি এসব কাণ্ড করছে। সঙ্গে রয়েছে এক সহযোগী। গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার দামি বাড়ি বা ফ্ল্যাট বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার নামে তারা দেড় বছর ধরে চালিয়ে আসছে প্রতারণা। অবশেষে তাদের গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) মহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, খলিলুর রহমান ও তার সহযোগী আবু সাঈদ নিজেদের বাড়ি বা জমি বিক্রির দালাল হিসেবে পরিচয় দেয়। বাস্তবে তারা এক বিজ্ঞাপনী ফাঁদ পেতে বসেছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তারা আকর্ষণীয় লোকেশনের বিলাসবহুল বিভিন্ন বাড়ির ছবি তুলত। পরে সেসব বাড়ির মালিক পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞাপন দিত বিক্রয় ডটকমসহ অন্যান্য অনলাইন স্পেসে। একইভাবে ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেওয়া হতো। সস্তায় কেনার আশায় লোকজন যোগাযোগ করত তাদের সঙ্গে। তাদের মোবাইল ফোনে এমন অজস্র ছবি পাওয়া গেছে। প্রতি মাসেই তারা মালিক সেজে অন্তত ১০টি বাড়ি-ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত। অথচ তাদের নিজেদের থাকার মতো জায়গা নেই।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, গুলশানের একটি বাড়ির মালিক ফারহা হোসেন আলম গত ২৬ মে বিক্রয় ডটকমে তার বাড়ি ‘হেনা কুঞ্জ’ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখতে পান। এতে তিনি বিস্মিত হন। কারণ বাড়ি বিক্রির কোনো উদ্যোগই তিনি নেননি। পরে ওই বিজ্ঞাপনের সূত্রে ক্রেতারা তার বাড়িতে যেতে শুরু করেন। তখন তারাও বুঝতে পারেন প্রতারণার বিষয়টি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ সময় দেখা যায়, অন্যের বাড়ির ছবির সঙ্গে প্রতারকতরা নিজেদের ফোন নম্বর জুড়ে বিজ্ঞাপন দিত। ফলে বাড়ি কেনা সম্পর্কিত প্রাথমিক কথা তাদের সঙ্গেই হতো সবার। এর মধ্যেই তারা নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। তদন্তের এক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের দু’জনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ১৩ জুন বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি। প্রতারণায় ব্যবহূত তিনটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলাটির তদন্ত তদারকের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, বাড়ি-ফ্ল্যাট বিক্রির ১০-১৫টি সাইটে তারা নিজেদের মালিক দাবি করে বিজ্ঞাপন দিত। এ ক্ষেত্রে অফিস হিসেবে একটি ভুয়া ঠিকানা দিত তারা। লোকজন সাধারণত ফোনেই যোগাযোগ করত। আর কেউ ঠিকানা অনুযায়ী গেলে দেখতেন, সেখানে কোনো অফিসই নেই। সূত্রঃ সমকাল।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments