করোনাভাইরাস রাজশাহীতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ অঞ্চলে করোনা চিকিৎসার সর্ববৃহৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না।
এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটু পর পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে কয়েকটি করোনা ওয়ার্ড ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনের ফাঁকা স্থানটি।
রামেক হাসপাতাল সূত্র মতে, গত ৩১ মে চারজন মারা যান করোনা ইউনিটে। এরপর জুন মাস জুড়ে মারা গেছেন ২৬৩ জন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকাল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায়ও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সূত্র মতে, ১, ২ ও ৭ জুন সাতজন করে ২১ জন, ৩ জুন তিনজন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫, ৮, ৯ ও ১০ জুন আটজন করে ৩২ জন, ৬ জুন ছয়জন, ১১ জুন ১৫ জন, ১২ জুন ৪ জন, ১৩, ১৬, ২০, ২১ ও ২২ জুন ১৩ জন করে ৬৫ জন, ২৩ ও ২৪ জুন ৩৪ জন, ১৪, ১৫ ও ১৮ জুন ১২ জন করে ৩৬ জন এবং ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন ১০ জন করে ৩০ মারা গেছেন।
রামেক পরিচালক ব্রিগেয়িার জেনারেল শামীম ইয়াজদাণী জানান, বুধবার রাজশাহীর দুই ল্যাবে তিন জেলার মোট ৬৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয়েছে ১৮৮ জনের। এদিন রাতে প্রকাশিত দু’টি পিসিআর ল্যাবের নমুনার ফলাফলে দেখা যায়, রাজশাহী শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৯৪%, নওগাঁয় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩২% ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৮৯%।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালের ৩৫৭ বেডের বিপরীতে করোনা ও উপসর্গের রোগী ভর্তি রয়েছেন ৪০৪ জন। গতকাল বুধবার ভর্তি ছিলেন ৪১০ জন। অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে অতিরিক্ত রোগিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর ২৭২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯, নাটোরের ২৬, নওগাঁর ৩২, পাবনার ১০, কুষ্টিয়ার ৩, চুয়াডাঙ্গার ১ ও ঢাকার ১ জন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা ইউনিটে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী থাকছেই। তাই বাধ্য হয়ে মেঝেতে বিছানা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ফাঁকা করে করোনা ওয়ার্ড ঘোষণা করলেই তো হয়। কিন্তু অক্সিজেন দিয়ে চাহিদা ফুলফিল করা যাবে না বলে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমরা করোনা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়াবহ বলছি। আমরা খবর পাচ্ছি যে, রাজশাহীর প্রতিটি ঘরে ঘরে করোনা রোগী রয়েছেন। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই, আশংকাও বাড়ছে দিন দিন।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়, সঠিক সময়ে আমরা সঠিক কাজটা করতে পারিনি। সে জন্য আমাদের করোনা রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়ছে। এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে যদি কাজ করি, এখনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সূত্রঃ ইত্তেফাক।