নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৮ জন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে যারা জড়িত একটি পক্ষ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার অনুসারী চর এলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল গনির কর্মী। অপর পক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারী চর এলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রেজ্জাকের কর্মী।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধরা হচ্ছেন- চর এলাহী ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হেলাল উদ্দিন (৩৫),ফিরোজ ২৫),সাদ্দাম হোসেন (৪০), ইলিয়াস (২৫), ইউসুফ (৩০), রুবেল (২৮), সবুজ(৩৫) ও বাহার (৩০)
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. সাইফ উদ্দীন আনোয়ার সংঘর্ষ, হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সচেতন বার্তাকে জানান, উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরো জানান ‘সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। কারও কারও মাথায় ককটেল বোমার স্প্রিন্টারের আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আহতদের উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’
ওসি সাঈফ উদ্দীন আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ চলে রাত ২টা অবধি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। তবে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোরে র্যাব-৭ এর একটি দল ল্যাংটা ক্লোজার ঘাট চরে অভিযান চালিয়ে চর এলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী সামসুদ্দীনকে ২টি বন্দুক ও ১২ টি কার্তুজসহ গ্রেপ্তার করে। এরপর দিন পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে চর এলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল গনির ভাই তাদের সঙ্গে ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে পুলিশ চলে যাওয়ার পরে আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীরা গণির ভাই ও আব্দুর রহিম নামে স্থানীয় আরও একজনকে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীর একাংশ। আব্দুর রহিমের মা থানায় অভিযোগ করেন।
আব্দুল গনি সমকালকে জানান, পরে ওই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রাজ্জাক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ‘শাহীন বাহিনীর’ ৫০-৬০ জন লোক ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করেন। এসময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ঘটনায় ৮ জন গুলিবিদ্ধ ও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি, যাদের মধ্যে তার পরিবারের নারী সদস্যরাও রয়েছেন।
আব্দুল গনি বলেন, ‘আমি কাদের মির্জার অনুসারী। সেজন্য আমাকে হত্যার জন্য রাতের আঁধারে আমার বসতবাড়িতে গুলি, বোমা হামলা করেছেন রাজ্জাক চেয়ারম্যান এবং উড়ির চরের ত্রাস শাহীন বাহিনী। আমি তাদের গ্রেপ্তার দাবি করছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে চর এলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘আহতদের মাথার ও শরীরের যে রক্ত পড়ছে সে রক্ত মোরগের। আমাকে ফাঁসানোর জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন মোরগ জবাই করে রক্ত মাথা ও শরীরে লাগিয়ে নাটক সাজিয়েছে। আমি গণির বাড়িতে হামলা করিনি। উল্টা তার লোকজন আমার বাড়িতে ককটেল হামলা করতে আসছিল।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিজানুর রহমান বাদলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘর্ষ চলছে কাদের মির্জার। কাদের মির্জার অভিযোগ, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে ও পৌর মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত করতে তার ভাই ওবায়দুল কাদের বাদলকে ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি দুজনের মধ্যে হাঙ্গামার ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জে হরতালের কর্মসূচিও দিয়েছিল বাদলের অনুসারীরা।
কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে।