মানিলন্ডারিং আইনের পরিধি বাড়িয়ে সাইবার, পর্নোগ্রাফি, জুয়া ও অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত অপরাধকে মানিলন্ডারিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। এই অপরাধগুলো বিবেচনায় এনে কঠিন শাস্তির বিধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২৮ ধরনের অপরাধকে সম্পৃক্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এতে সাইবার, পর্নোগ্রাফি, জুয়া ও অনলাইন জুয়া অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই মানিলন্ডারিং আইনের আওতায় এখন এগুলো নিয়ে আসা হবে। এতে করে ভবিষ্যতে যারা এই অপরাধগুলো করবেন, তাদের সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় শাস্তির মুখোমুখি করা সহজ হবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে অপরাধগুলোর শাস্তির মেয়াদ ও জরিমানার পরিমাণও বাড়বে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, এর আগে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি। এ সভায় সাইবার, পর্নোগ্রাফি, জুয়া ও অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত অপরাধকে মানিলন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ত অপরাধে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগকে আহ্বায়ক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। খুব শিগগির এই কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে নতুন চার ধরনের অপরাধকে কীভাবে দ্রুত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে, বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে অপরাধগুলো; ‘যাহা দেশে বা দেশের বাহিরে ও সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত কোনো অর্থ বা সম্পদ লন্ডারিং করা বা করিবার চেষ্টা করা।’
এই অপরাধগুলো হলো- দুর্নীতি ও ঘুষ, মুদ্রা জালকরণ, দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অবৈধ মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা, অপহরণ, অবৈধভাবে আটকে রাখা ও পণবন্দি করা, খুন, মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি, নারী ও শিশু পাচার, চোরাকারবার, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, চুরি বা ডাকাতি বা দস্যুতা বা জলদস্যুতা বা বিমান দস্যুতা, মানব পাচার বা কোনো ব্যক্তিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোনো অর্থ বা মূল্যবান দ্রব্য গ্রহণ করা বা করার চেষ্টা, যৌতুক, চোরাচালানি ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ, মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থ জোগান, ভেজাল বা স্বত্ব লঙ্ঘন করে পণ্য উৎপাদন, পরিবেশগত অপরাধ, যৌন নিপীড়ন, পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার আগে তা কাজে লাগিয়ে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে বাজার সুবিধাগ্রহণ ও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা, সংঘবদ্ধ অপরাধ বা সংঘবদ্ধ অপরাধী দলে অংশগ্রহণ, ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়।
সূত্র জানায়, দেশের সর্বশেষ অবস্থার বিবেচনায় এনে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের পরিধি বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সূত্রঃ প্রতি-সংবাদ।