fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িঘটনা-দুর্ঘটনাআওয়ামীলীগ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টায়

আওয়ামীলীগ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টায়

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের বাস ভবনে হামলার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ, জনপ্রতিনিধি, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় প্রশাসন। ইউএনওর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জনপ্রতিনিধি ও বিসিসি। এরইমধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল বিভাগের পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানবৃন্দ।

অপরদিকে, ঘটনার সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দলটির নীতিনির্ধারকরা বিব্রত। তবে ওই ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ উল্লেখ করায় ক্ষুব্ধও হয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাঁরা বলছেন, এই ঘটনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যেত। তাঁরা এখন সেই চেষ্টাই করছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক।

এদিকে সদর উপজেলা ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার রাতের ঘটনায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ উল্লেখ করে গ্রেপ্তারের দাবি তোলে সংগঠনটি। তারা এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

অপরদিকে মেয়রসহ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিসিসি আয়োজিত মানববন্ধন থেকে। অন্যদিকে পুলিশ ও ইউএনওর পক্ষ থেকে দায়ের করা দুই মামলায় একের পর এক আসামিদের গ্রেফতার করছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ শনিবার মামলার দুই নম্বর আসামি কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহমেদ মান্নাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাবের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তবে বিষয়টি মিটমাট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে বিসিসি কর্মীদের নগরী পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। একই সঙ্গে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি প্রশাসনকে বিসিসির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়িতে অভিযান না চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে নগরীর কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, আমি অন্যায় করে থাকলে আমার এ চেয়ারে থাকার অধিকার নেই। আমার বিচার করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ দুঃসময় নেতাকর্মীরা পাশে থাকায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

গ্রেফতারের আশঙ্কার বিষয়ে মেয়র বলেন, পালিয়ে যাব না, গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত আছি। বললেই থানায় হাজির হব। আমার বাসা ঘেরাও করার দরকার নেই। আমি পরিচিত লোক, দলের সাধারণ সম্পাদক, আমার মুখ সবাই চেনেন।

তিনি বলেন, এটি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি। এই বাড়ির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। ব্যানার অপসারণের প্রশ্নে মেয়র বলেন, ব্যানার লাগানো দলের সিদ্ধান্ত ও অপসারণও দলের সিদ্ধান্ত। এটা দলের ব্যানার, ইউএনও সরকারি চাকরি করেন, বাধা দেয়ার কেউ না।

মেয়র বলেন, আপনারা যারা আন্দোলন করছেন তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করা বিসিসি কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেয়র। এ ছাড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন স্থানে যারা আন্দোলন করছেন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বলেন।

সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি বার বার বলেছি ষড়যন্ত্রের কথা। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিন বছরের ষড়যন্ত্র চলাকালে একনেকে ১৩০ কোটি টাকা পাস হলেও টাকা পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ না পেয়েও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনোভাবেই পেরে উঠতে না পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে এসেছে।

ব্যানার অপসারণ প্রশ্নে বলেন, ব্যানার লাগানো দলের সিদ্ধান্ত ও অপসারণও দলের সিদ্ধান্ত। এটা দলের ব্যানার, ইউএনও সরকারি চাকরি করেন এটা বাধা দেয়ার তিনি কেউ না।

সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্যানেল গাজী নঈমুল ইসলাম লিটুসহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সংবাদ সম্মেলন: বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগের পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানবৃন্দ।

গতকাল বিকাল ৪টায় পৌর মেয়রদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গৌরনদীর পৌর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সিসি ক্যামেরায ওই রাতের খণ্ডিত ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ইউএনওর বাসায় হামলা চালায়নি।

বরং ইউএনও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে তার নিজ বাসায় আটকে রাখেন। তারা ইউএনওর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং একই সাথে ইউএনওর অপসারণসহ পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। এ সময় বিভাগের অন্যান্য পৌর মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।

বিকাল ৫টায় একই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন বিভাগীয় কমিটির নেতারা বলেন, সিটি করপোরেশন রাতের বেলা বর্জ্য অপসারণ করে। ইউএনও মুনিবুর রহমান গায়ে পড়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সাথে ঝামেলার সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। তার কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছেন ইউএনও। তারা ইউএনওর অপসারণ, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়েরকৃত মামলা দুটি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এ সময় বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, আগৈলঝাড়ার চেয়ারম্যান আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, গৌরনদীর চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী, উজিরপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিসিসির: গত বুধবার রাতের সিটি মেয়রকে লক্ষ্য করে আনসার সদস্যদের গুলি এবং পুলিশ ও ইউএনওর দায়ের করা দুটি মামলায় সিটি মেয়রসহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর টাউন হলের সামনে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফয়সাল হাজবুন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার, রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার, কর নির্ধারক কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন এবং বেলায়েত বাবলুসহ অন্যরা।

বক্তারা বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে চায়। তারা জনগণের সেবক। অথচ মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তারা অনেকে আত্মগোপন করেছেন। এ কারণে নগরবাসীর সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তারা নগরবাসীর সেবা অব্যাহত রাখতে মেয়রসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অনতিবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

মৃত ব্যক্তির নামেও মামলা : বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবনে হামলা এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এক মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকারি কৌশলী একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে পুলিশের দায়ের করা মামলায় মৃত ব্যক্তি মো. নাদেরকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি সাত মাস পূর্বে মারা যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা মৃত মো. সাদ্দামের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।

তিনি আরো জানান, ঘটনার সময় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থানকারী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককেও আসামি করা হয়েছে পুলিশের মামলায়। এছাড়া নেতাকর্মীদের বাসায় হানা দিয়ে পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মেয়রকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া প্রশাসনের প্রত্যাহারের দাবি আওয়ামী লীগের : এদিকে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। একই সাথে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে অটল তারা।

বরিশালের ঘটনা মিটমাট হতে পারে: বিষয়টি মিটমাট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ওই ঘটনায় মেয়র বরখাস্ত হতে পারেন কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে পোস্টার অপসারণ নিয়ে সেখানে ইউএনওর সঙ্গে মেয়রের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন ইউএনও এবং থানার পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। এমনও হতে পারে তারা মামলা প্রত্যাহারও করতে পারেন। বিষয়টি দুই জনের মধ্যে মিটমাট হয়ে যাবে। এটি এমন পর্যায়ে যায়নি যে তাকে বরখাস্ত করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। বরখাস্ত করতে হলে সেখানে কারো বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হতে হবে। কারো বিরুদ্ধে মামলা হলেই যে তিনি বরখাস্ত হবেন তা কিন্তু না। আর আদালতে যদি তিনি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাকে বরখাস্ত করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতের বেলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মীরা অবৈধ ব্যানার উচ্ছেদ করতে সদর উপজেলা পরিষদের চত্বরে যায়। সেখান থেকে বাধা পেয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউএনওর বাসায় প্রবেশ করে।

এ সময় ইউএনওকে রক্ষায় নিরাপত্তা কর্মীরা গুলিবর্ষণ করে। পরে পুলিশ এসে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও লাঠিচার্জ করলে ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হয়। এরই জের ধরে ঘটে পরবর্তী ঘটনা।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments