অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে বরিশাল সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের (ইউএনও) বাসায় হামলার ঘটনায় ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। সমাধান হলো। মেয়র, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ নিয়ে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উভয় পক্ষ মেনে নেওয়ায় থমথমে বরিশাল স্বাভাবিক উজ্জীবিত বরিশাল হয়েছে।
রবিবার রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এক বৈঠকে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দারসহ কর্মকর্তারা বসে মিমাংসা করেন।
এ সময় সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বৈঠকে ইউএনও উপস্থিত ছিলেন না।
বরিশালের ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রবিবার দুপুরে জানিয়েছিলেন, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হচ্ছে। অবশেষে রাতেই সেই সমাধান এলো।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পোস্টার-ব্যানার নামানোকে কেন্দ্র করে মারামারির জের ধরে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে কয়েক দফা হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা । এ সময় ইউএনওর বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০-৪০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই পরদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ইউএনও নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা এবং পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৯৪ নেতার নাম উল্লেখসহ আরও ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
অন্যদিকে ইউএনওর মামলায়ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। এতে বরিশালের ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন তুলে।
এ মামলার তিনদিনের মাথায় রবিবার ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি পৃথক মামলার নালিশি আবেদন করা হয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার নালিশি আবেদন দুটি করেন। এতে বরিশালের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।রবিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি জানান, বরিশালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসনের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তা, খুব শিগগিরই সমাধান হবে।
এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হয়, আবার তা নিরসনও হয়।
তিনি বলেন, বরিশালে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটেছে, তা সমাধানের দিকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
পরে বিষয়টি নিয়ে রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। সমঝোতায় কী হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমান জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরে জেলা বা বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হবে।
ই ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়রসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ২২ জন কারাগারে আছেন। পরবর্তী সময়ে মেয়রের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসিসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হলে বিচারক পিআইবিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
ভুল বোঝাবুঝির অবসানে কী শর্তে সমঝোতা হয়েছে বা জেলে থাকা ২২ জনের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত বা মামলা প্রত্যাহারের কোন শর্ত আছে কি-না তা তিনি নিশ্চিত করেননি।