আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের প্রবেশপথে বোমা হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সেনা নিহত হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এই খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবুল বিমানবন্দরে হামলায় ১২ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে। আর এটাই গত বছরের (২০২০) ফেব্রুয়ারির পরে আফগানিস্তানে প্রথম মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা।
এর আগে সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের আবে ফটকে এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন নিশ্চিত করে। কাবুলের একজন ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মার্কিন সেনাসহ ৬০ বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৪ জনের বেশি। এ নিয়ে পশ্চিমাসমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই প্রথম এমন বিস্ফোরণ ঘটলো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, বিস্ফোরণ ঘটেছে বিমানবন্দর লাগোয়া ব্যারন ক্যাম্পের ভেতরের জটলা থেকে। যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছেন, তারাই ব্যারন ক্যাম্পে জড়ো হয়েছিলেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অন্তত দুটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর মধ্যে একটি ঘটেছে ব্যারন ক্যাম্পের পাশে। পেন্টাগনের তরফ থেকে ‘কয়েকজন মার্কিন ও বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের’ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বেশ কিছু মরদেহ পড়ে থাকার ছবিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে গুলির শব্দও শোনা গেছে। এ বিষয়টি অবগত করা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বা বোমা হামলার জন্য পশ্চিমারা আগে তালেবানকে দায়ী করতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এখন এ ধরনের হামলার জন্য ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা। কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাতের অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই ভেস্তে গেছে।
তালেবানের আগ্রাসনের মুখে গত ১৫ আগস্ট পশ্চিমাসমর্থিত সরকারের পতন ঘটে। তারপর থেকেই কাবুল চালাচ্ছে তালেবান।
যদিও তারা সবার জন্য ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছে, তবে তালেবান ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে আফগানিস্তান ত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ কাবুলে বিশেষ প্লেন পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়েছে। কাবুল বিমানবন্দরে এই কার্যক্রমই চলছে এখনো।