সচেতন বার্তা, ৮ জুলাই:শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও যুক্তিবাদী মানস গঠনের পাশাপাশি সমাজের সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনার জন্য বিতর্কচর্চার ওপর জোর দিয়েছেন এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া বক্তারা। তাঁরা বলেছেন, বর্তমানে সমাজে যে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তার থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় হতে পারে বিতর্কচর্চা। তাই এই প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে পাঠ্যক্রমে বিতর্কচর্চার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
রোববার ‘পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব’ এর আওতায় ‘প্রতিটি বিদ্যালয়ে চাই বিতর্কচর্চা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কারওয়ান বাজারের সি এ ভবনে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় বিতার্কিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, পৃষ্ঠপোষক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিতার্কিক ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকে টি কে গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল হক প্রশ্ন তোলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য যদি বিশেষায়িত শিক্ষক থাকতে পারেন, তাহলে বিতর্কের জন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক কেন থাকবেন না? তাঁর মতে, শৈল্পিক এই মাধ্যমটির স্বীকৃতির অভাব আছে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা বিতর্কচর্চার বিষয়ে আগ্রহী হয় না। এ জন্য এমন একটা পেশাগত কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন যাতে করে বিতর্কচর্চার মাধ্যমে স্বীকৃতির পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনাও লাভ করা যায়।
এনডিএফ বিডির চেয়ারম্যান এ কে এম শোয়েব যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিতার্কিকদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতাগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ের বিতার্কিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মেধা দেশজুড়ে আছে। এখন কেবল সুযোগ তৈরি করে দেওয়া দরকার। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের সততা ও নিষ্ঠাও অসাধারণ।
বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি আবদুল্লাহ মহম্মদ শুকরানা বিতার্কিকদের সঙ্গে বিচারক ও বিদ্যালয়ের বিতর্ক ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কথা বলেন।
অবশ্য বিতার্কিক মাহফুজ মিশু বিতর্ক ক্লাবগুলোর কার্যক্রম কেবল বিতর্কের মধ্যে আটকে রাখার একটা প্রবণতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটা একটা বড় সংকট। বিতর্ক করার জন্য পাঠাভ্যাস একটা জরুরি অনুষঙ্গ। কিন্তু কোনো ক্লাবকে নিয়মিত পাঠচক্র করতে দেখা যায় না। তাই স্বভাবতই বিতর্কে বিষয়ের ঘাটতি তৈরি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির এফ এম রাকিব সিরাজী বলেন, বিতর্কচর্চাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক পর্যায় থেকে চেষ্টা চলছে। তবে এটাকে আরও সর্বজনীন করে তোলার জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক রিদিতা তাহসিন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিচারক ও বিতার্কিকদের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, অনেক সময় বিচারকেরা নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিতার্কিকদের সম্পর্কে আগাম একটা ধারণা নিয়ে রাখেন। ফলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভালো করলেও অনেক ক্ষেত্রে পেরে ওঠে না।
শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শশীতা ইসলামের বক্তব্য, ‘ঢাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ কম হয়। এটা হলে আমরা নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পেতাম।’
গোলটেবিল আলোচনায় সূচনা বক্তব্য দেন বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন। প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন কে এল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাজনীন আক্তার ও শিক্ষার্থী আকাশ পাল, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক গোলাম মুরশিদ, বিতার্কিক রিজিয়া রহমান, শাকিল মাহবুব, খায়রুন নাহার, জাফর সাদিক, ইসরাত জাহান নূর, মেহজাবিন তোরসা, প্রমুখ।
বক্তারা দেশে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পরিমাণ না বাড়িয়ে স্কুল ও ক্লাব পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনের কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে সংগঠক, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরামর্শ দেন তাঁরা। পাশাপাশি এ বিষয়ে অভিভাবক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলেন। আর কম-বেশি সবাই জোর দেন পাঠ্যক্রমে বিতর্কচর্চার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার ওপর। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বির্তকের বিষয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য মাসিক কিশোর আলোতে বিতর্কবিষয়ক একটা বিভাগ চালু করার দাবি জানানো হয়।