সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা জামায়াতে ইসলামের। তার আগেই সরকারের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ২ লাখ সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা দলটির।
সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের নেতাদের রিমান্ডে এসব তথ্য জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। ক্ষমতা লিপ্সায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি তৈরি করেছে ত্রিশশালা পরিকল্পনা। দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে নানা রকম ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে নিজেদের কর্মী সংগ্রহ করছে নিবন্ধন হারানো দলটি। টার্গেট করা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে।
২০১৩ সালে একটি রিটের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধা দলটি সবশেষ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিতে পারলেও রাজনীতিতে ফেরার বিভিন্ন পথ খুঁজছে দলটি।
চলতি মাসের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। দু’দফা তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার দাবি গোয়েন্দাদের।
২০১৮ থেকে ২০৪৮। ত্রিশশালা পরিকল্পনা জামায়াতে ইসলামীর। ভিশন-৪৮ সামনে রেখে পাঁচটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। পরিকল্পনায় সরকারের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ২ লাখ কর্মী নিয়োগ করা হবে। তাদের মূল টার্গেট দেশের, কৃষক শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। টার্গেট করা হয়েছে তরুণ প্রজন্মকেও। জামায়াত পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধি করা হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, তারা (জামায়াত) দেশে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে, যেখানে বিদেশ থেকে ফান্ড এনে তারা মূলত দলের জন্য ব্যবহার করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দল তৈরি করে ছাত্রলীগের মধ্যে তাদের প্রবেশ করিয়ে দেওয়া। কিছু কিছু মানুষকে তারা হেফাজতের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এভাবে তারা গোপন তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে যাওয়া।
গোয়েন্দা পুলিশ সারা দেশে প্রায় ৪০০ ট্রেড ইউনিয়নের তথ্য পেয়েছে যেগুলো জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে। এসব ইউনিয়নের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, তাদের মূল টার্গেট ছিল একদিকে আওয়ামী লীগ সেজে তাদের অর্জন বিনষ্ট করবে, অন্যদিকে বিভিন্ন অরগানাইজেশনের সঙ্গে মিলেমিশে একত্রিত হওয়া। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই যে বসুন্ধরায় তারা মিলিত হয়েছিল এ কারণেই।
এর আগে ২০১৪ এবং ‘১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও ব্যাপক সহিংসতা এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল দলটি। ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা করেছে তারা। এবার আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবারও তারা ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।