সচেতন বার্তা, ১৯ জুলাই: ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। যৌন নিপীড়নের পর হুমকি-ধমকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে তিনি ওই দুটি পরীক্ষায়ই অংশ নিতে পেরেছিলেন। এর পরই তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল বুধবার প্রকাশিত তাঁর পরীক্ষার এই ফল আবারো কাঁদাল সহপাঠীদের। কাঁদলেন স্বজনরাও।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন বলেন, ‘সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। কোরআন মাজিদ এবং হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। সব পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফল অর্জন করত। লেখাপড়ার প্রতি কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় তার দৃষ্টান্ত নুসরাত।’
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সহপাঠী ও স্বজনরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখও শোকের অশ্রুতে সিক্ত হয়। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির।
ফল জানতে আসা নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম বলেন, “আজ নুসরাতেরও পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আনন্দে থাকার কথা ছিল। কিন্তু পাষণ্ডদের নির্মমতায় নুসরাত আজ আমাদের মাঝে নেই। দুটি পরীক্ষায় সে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকি পরীক্ষা দিতে পারলে সে ভালো ফল করত।”
এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বিলাপ করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে ইনশাআল্লাহ।’
কাঁদতে কাঁদতে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, “সকাল থেকে নুসরাতের বেশ কয়েকজন সহপাঠী ফোন দিয়ে রেজাল্টের খবর জানায়। কেউ ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে, কেউ ‘বি’ গ্রেড। ওরা নুসরাতের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নুসরাত পরীক্ষা দিতে পারলে সেও ভালো রেজাল্ট করত বলে তারা জানায়।”
নোমান আরো বলেন, ‘নুসরাত খুব মেধাবী ছিল। ২৭ তারিখের দুর্ঘটনার পর আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে অনুযায়ী ১ ও ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয় সে।’