fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িচট্টগ্রামচট্টগ্রাম সিটিসিনহা হত্যার রায়ে ‘বন্ধ হবে ক্রসফায়ার’, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চায় পরিবার

সিনহা হত্যার রায়ে ‘বন্ধ হবে ক্রসফায়ার’, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চায় পরিবার

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ৩১ জানুয়ারি (সোমবার)। ঘটনার প্রায় ১৮ মাস পর রায়ের দিন ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছে সিনহার পরিবার।

‘গত বছর ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সর্বশেষ দুই আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আগামী ৩১ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন বিচারক। সবকিছু ঠিক থাকলে রায়ের দিন সিনহার পরিবারের সদস্যরাও আদালতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।’

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত এ মেজর। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সেসময় প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

তবে কক্সবাজারের পুলিশ সেসময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে র‌্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।

প্রদীপ-লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে। আমার মতো আর কোনও বোনের বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাই রায়ে প্রমাণ হোক।

তিনি বলেন, ‘মামলার ১৫ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে ১ ও ২ নম্বর আসামি (ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত) হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। এই দুই জনের সর্বোচ্চ সাজা হবে, আমরা এটা প্রত্যাশা করছি। বাকি আসামিদের যার যার অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেওয়া হোক।’

শারমিন শাহরিয়া আরও বলেন, ‘অবশ্যই আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দেবেন। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অর্থাৎ ক্রসফায়ার বন্ধ হবে বাংলাদেশে। মানুষ সুবিচার পাওয়ার আশা রাখবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। যে কেউ বিচার চাওয়ার জন্য আদালতে আসবেন।

সিনহার পরিবারের পাশাপাশি মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে। তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তারা খালাস পাবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, ‘সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।

এই মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাবেক এএসআই সাগর দেব।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

“গত বছরের ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন দুজন। তারা হলেন- মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত।

দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার, তৃতীয় দফার তিন দিনে আট, চতুর্থ দফার দুই দিনে ছয়, পঞ্চম দফার তিন দিনে ১৫, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচ এবং অষ্টম দফায় তিন দিনে একজনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ আসামির সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।”

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments